ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার এবং নাগরিকের ডেটা সুরক্ষা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। এই দুটি দাবিসহ সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে পাঁচটি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের দাবি ও পরামর্শ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। সেখানে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারগুলো (১৫ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ) টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটকে সকল নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার পাঠানো চিঠিটি বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করেছেন তিনি। চিঠিতে প্রস্তাবের পক্ষে সেখানে তুলে ধরা ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের (খ) উপ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, চিঠি পত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকবে। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের যুগে চিঠিপত্রের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে গেছে। বর্তমানে ইমেইল, অ্যাপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে নাগরিকের ডেটা ও তথ্যের নিশ্চয়তা একান্ত আবশ্যক। তাই চিঠি পত্রের পাশাপাশি নাগরিকের সব অনলাইনে ডেটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক। একইভাবে নাগরিকের সাইবার সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি বিধায় সাইবার সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কারে ৫ পরামর্শের মধ্যে রয়েছে- সংবিধানের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ে একটি নতুন ধারা সংযোজন করা যেতে পারে, যেখানে উল্লেখ থাকবে যে প্রতিটি নাগরিকের জন্য ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার একটি মৌলিক অধিকার। সরকার নাগরিকদের জন্য সুলভ এবং সমান ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করবে। গ্রামীণ ও শহর অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবার সমতা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া। নাগরিকদের ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা এবং ডিজিটাল গোপনীয়তা নিশ্চিত করার জন্য একটি আলাদা ধারা সংযোজন করা। সরকারের ও বেসরকারি সংস্থার ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং ব্যবহার সংক্রান্ত নিয়মাবলি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা। নাগরিকদের তাদের ডেটা দেখার, সম্পাদনার এবং মুছে ফেলার অধিকার নিশ্চিত করা। একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ ডেটা সুরক্ষা তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা গঠনের সুপারিশ। ইন্টারনেট ব্যবহারে বৈষম্য, সেন্সরশিপ এবং অপ্রয়োজনীয় নজরদারি রোধে আইন প্রণয়ন। নাগরিকদের ডেটা সুরক্ষা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার নিয়ে সচেতন করার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা।
সংবিধানের এই সংশোধনে জাতিসংঘের ইন্টারনেটকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর)-এর মতো মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। এসব দাবি ও পরামর্শের ব্যাখা দিয়ে সংগঠনটি জানায়, ২০১১ সালে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতভাবে ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর আগে বিশ্বের চারটি দেশ বিশেষ করে ২০০০ সালে এস্তোনিয়া, ২০০৯ সালে ফ্রান্স এবং ২০১০ সালে কোস্টারিকা সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। জাতিসংঘের স্বীকৃতি দেওয়ার পর আরও ৪২টি দেশ ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এমনকি মেক্সিকো সরকার জনগণের দাবির কাছে এর মধ্যে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন ইন্টারনেটে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করতে। সংগঠনটি জানিয়েছে, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা জাতিসংঘের আইটিইউ অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন কর্তৃক স্বীকৃত।