কথা ছিলো আগামী ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (জিপিইউ) কার্য নির্বাহী কমিটির প্রথম নির্বাচন। সেই লক্ষ্যে দুইটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী নিয়ে শুরু হয় নির্বাচনের হাওয়া। দ্বি-বার্ষিক এই নির্বাচনে ১৭ পদের জন্য ৩৯ জন প্রার্থী নামের ভোটের মাঠে। ভোটাধিকারের সুযোগ পান সারদেশে বিস্তৃতি ইউনিয়নের ৯৬৯ জন ভোটার। কিন্তু আচমকা স্থগিত হলো সেই ভোট।
শ্রম অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত চিঠির সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার নির্বাচন স্থগিতের নোটিশ দিয়েছে জিপিইউ নির্বাচন কমিশন। আর এর মাধ্যমেই নিবন্ধন প্রাপ্তির পাঁচ বছরের মাথায় প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোট দেয়ার সুযোগ নিয়ে ফের সংশয়ে পড়েছেন জিপিইউ সদস্যরা।
চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় ‘ত্রুটিবিচ্যুতি’ রয়েছে এমন আপত্তি তুলেছে খোদ গ্রামীণফোন এবং কতিপয় সদস্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ভোট স্থগিত করে নোটিশ জারি করেছেন জিপিইইউ কার্য নির্বাহী কমিটি নির্বাচন বোর্ড। নির্বাচন বোর্ডের প্রধান মুহাম্মাদ নূর ই আলম, সদস্য অনামিকা জামান এবং সদস্য সচিব মোঃ রবিউল হাসান। কমিশনের তিন সদস্যের স্বাক্ষরিত ওই নোটিশটি দেয়া হয় বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচক তত্ত্বাবধায়ক ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিচালকের কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর। বৈঠকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ত্রুটি-বিচ্যুতি বিষয়ক অভিযোগ নিয়ে বেশ কিছু কাগজ উপস্থাপন করা হয়। তবে অভিযোগকারীর পরিচয় নোটিশে সুস্পষ্ট না হলেও গ্রামীণফোনের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও ইউনিয়নের জনৈক সদস্যের কথা উল্লেখ আছে। তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী, গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন এর সংশ্লিষ্ট সবগুলো মামলায় আদালতের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের সার্টিফায়েড কপি ও আদেশের কপি প্রাপ্তি সাপেক্ষে তা চূড়ান্ত ভোটর তালিকায় প্রতিফলনের নির্দেশনা দেয়া হয় নির্বাচন কমিশনকে।
আর নির্ভুল ভাবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্যই ধার্যকৃত দিনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মাদ নূর ই আলম। ওই বৈঠকে তিন নির্বাচন কমিশন সদস্য, নির্বাচনে শ্রম মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়ক পরিচালক রোখসানা চৌধুরী এবং শ্রম অধিদপ্তর পরিচালক (ট্রেড ইউনিয়ন, সালিশী ও প্রশিক্ষণ শাখা) এনামুল হক এবং ইউনিয়নের সাব-কমিটি সদস্য মাতুজ আলী ও ইমরুল কায়েস উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, গ্রামীণফোন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং কতিপয় ইউনিয়ন সদস্য অভিযোগ করেছেন বলে শ্রদ্ধেয় পরিচালক রোকসানা ম্যাডামের কাছ থেকে অবগত হই। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে শ্রম অধিপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক আমাদের জানান, যাদের মামলা চলমান তাদের সদস্য থাকবে কি থাকবে না যাচাই বাছাইয়ের পর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচন করতে হবে।
তবে এভাবে স্থগিতাদেশে হতভম্ভ হয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। তারা চাইছেন, খুব শিগগিরই নতুন বাংলাদেশে প্রত্যক্ষভোটে নির্বাচিতদের মাধ্যমেই গ্রামীণফোন ইমপ্লয়িজ ইউনিয়ন আবারো স্ব-মহিমায় ফিরবে।
জিপিইইউ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ওমর ফারুকের নেতৃত্বে তিনটি সহ-সভাপতি পদে ইমরুল কায়েছ, মুরাদ রাসুলুল ও আতিকুজ্জামান মির্জা; সাধারণ সম্পাদক পদে শাখওয়াত হোসাইন, সহ-সাধারণ সম্পাদকের দুই পদে আক্তার হোসাইন ও বুলবুল আহমেদ; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-২ পদে ববি শারমিন; সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জিয়াউর রহমান; কোষাধ্যক্ষ পদে রমজান হোসাইন; তিন জন প্রচার সম্পাদকের মধ্যে আদিবা জেরিন, সুহেল মিয়া ও সাঈদ আহমেদ এবং দুই কার্য নির্বাহী সদস্য সাইফুল ইসলাম মাসুক ও শাহজাহান শাহ।
অপরদিকে এক যুগ ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি (ভিপি-১) ফজলুল হকের নেতৃত্বে অপর দলে রয়েছে খন্দকার হাসান শাহরিয়ার; এ এন এম আল ফারাবি; মোছাঃ রুখসানা পারভীন, মাতুজ আলী কাদরী; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এএসএম সালেহ; মোঃ বেলাল হোসাইন; রাজু সিংহ; মাহমুদুল হাসান; মোহাম্মাদ আলি ভূঁইয়া; মাজহারুল ইসলাম; উজ্জ্বল কুমার নন্দী এবং দিলরুবা হোসাইন।
এছাড়াও স্বতন্ত্র হিসেবে ওয়ালিদ আল এমদাদ (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক – ২), জিয়াউর রহমান মিল্টন (প্রচার সম্পাদক – ২), মাহফুজুর রহমান (কার্যকরী সদস্য – ২), কাজী আব্দুর রহিম (কার্যকরী সদস্য – ২) এবং আবিদ হাসান (কার্যকরী সদস্য – ৩) প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
আগামীকাল থাকছে ‘জিপিইউ নির্বাচন স্থগিতের পেছনের রহস্য’ নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন।