গ্রাহক, অপারেটর এবং সরকার সবাই চায় রোবস্ট ও ইনক্লুসিভ ডিজিটাল কানেক্টিভিটি। তাই আজকের দিনে ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার আইন হওয়া উচিত। কখনোই ইন্টারনেট বন্ধ হওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে সবার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে ব্যবসা সুরক্ষায় নয় সেবার চাহিদায় গুরুত্ব দিয়ে রেফারির দায়িত্ব পালন করবে বিটিআরসি।
সোমবার টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ টিআরএনবি আয়োজিত ‘আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের গুরুত্ব’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী’র।
তিনি বলেন, ট্রানসমিশন আলাদা করার ধারণা থেকে এনটিটিএন’র জন্ম। কিন্তু এখন এনটিটিএন আজ সমস্যা হিসেবে অভিযুক্ত। আসলে রাস্তার সঙ্গে এনটিটিএন এর তুলনা করাটা যৌক্তিক নয়। কেননা, সড়ক থেকে কোনো আরওআই আসে না। ইন্টারনেটের কেন্দ্রে রয়েছে এনটিটিএন। সে জন্য সরকার সর্বাত্মক সহায়তার করেছে। কোথাও কোথায় মাত্র ছাড়িয়েছে কিনা তা দেখা যেতে পারে। ১০ বছরে তারা উপজেলা হেড কোর্টারে পৌঁছেছে। কিন্তু এই পৌঁছানের ধরনটা কি। অভিযোগ উঠেছে পর্যাপ্ত পপ নেই। ফাইবার টু হোম ঢাকা বা ঢাকার বাইরে কোথাও কাজ করেনি। কেননা আইএসপি’রা সাশ্রয়ী মনে করে না।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান এসময় প্রশ্ন তোলেন, ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি না করে এগুনো মধ্যসত্বভোগী কি না? সরকার অনেক কিছু করলেও সত্যিই কি নেটওয়ার্ক পৌঁছেছে।
তিনি আরো বলেন, সামিটের ৫০ শতাংশ এবং ফাইবার অ্যাট হোমের ২৭ শতাংশ মাত্র আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লে করা হয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কখনো কমানো সম্ভব নয়। এর সল্যুশন ব্রডব্যান্ড। এজন্য আমরা একটি ব্রডব্যান্ড পলিসি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। টেকনোক্রাট হিসেবে বলতে পারি আমাদের ডার্ককোরের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। এটার প্রাপ্যতা নিয়ে মোবাইল অপারেটররা সামনের দিনে সংকটে পড়বে। তাই আমাদের টেকসই পথ খুঁজতে হবে। মোবাইল অপারেটর এবং এনটিটিএন দুইজনের ওপর আস্থা রেখেই দেখেছি। ফল আসেনি। কেননা, মোবাইল অপারেটরা একটা সুইট পয়েন্ট মিস করেছে। ডাটা রেভ্যুলেশনে তারা এখন ডিজিটাল সেবাদাতা হিসেবে পরিচিত হতে চায়। ইন্টারনেটের দাম জলের দামে নেমে না আসলে এটা সম্ভব হবে না। এজন্য নেটওয়ার্ক সাসটেইন করতে হবে। তাই আমরা অ্যাসেট লাইট মডেলে যেতে পারি। ট্রান্সমিশন নেটওয়ারর্ক থার্ডপার্টির কাছে দেয়া দরকার। পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবা ব্যবসায়কে সম্প্রসারণ করতে হবে যাতে তরুণা ঝাঁকে ঝাঁকে অংশ নিতে পারে। আইআইজি লাইসেন্স ৭-৮ এর মধ্যে থাকা দরকার। আবার এটাও দেখা দরকার এই লাইসেন্সের মধ্যে আমরা জিম্মি হতে পারি না। বিজনেসকে সাসটেইন করতে হবে হবে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। তাই টেকনোলজি নিউট্রালিটি, সাইটেইনবল নেটওয়ার্ক তৈরি, লাইসেন্সিং রেজিম রোধ করতে চাই। সেবাকে টেকসই, সাশ্রয়ী করতে যা করার তাই করবো।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবি সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী। সংগঠনের সভাপতি সমীর কুমার দে’র সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারাদেশে সরকারি বেসরকারি মিলে সারাদেশে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছে। আর এ নেটওয়ার্কের ফলে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট ভিত্তিক সকল সেবা ছড়িয়ে পড়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার বলেছেন, অপতথ্যের অজুহাতে আমরা কোনো ভাবেই ইন্টারনেট বন্ধ করতে পারি না। এজন্য আইন করা দরকার। টেলিকমের অবকাঠামো, কন্টেন্ট এবং প্রতিযোগিতা তিনটি বিষয় নিয়ে পলিসি পর্যালোচনা করে ঢেলে সাজানো উচিত।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার,, টেলিটক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মা’বুদ চৌধুরী, ফাইবার অ্যাট হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল হক সিদ্দিকী, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডের চিফ নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট (সিএনএ) ফররুখ ইমতিয়াজ, রবি আজিয়েটার করপোর্টে অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহদ আলম, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান এমটব মহাসচিব মোঃ জুলফিকার, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক প্রমুখ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।