এক দেশ এক রেট নিয়ে এখনো খুশী নয় গ্রাহক। সেবাদাতার এটা বুঝলেও সুযোগের বৈষম্যে মুখোমুখি অবস্থানে দেশের মোবাইল অপারেটর (এমএনও) এবং এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান। তাদের ভাষ্য, কম বিনিয়োগে বিপুল মুনাফা করছে এনটিটিএন। সেবা চুক্তি ভঙ্গসহ (এসএলএ) গাইডলাইন লঙ্ঘন করে ওভারহেড ফাইবারও দেয় তারা। এমনওদের ওয়ান টাইম চার্জ (ওটিসি) ক্যাপেক্স দিয়ে এনটিটিএন ফাইবার রেডি করলেও এর সুপ্রভাব লক্ষ্যণীয় নয়। তাই বিটিআরসি গাইডলাইন মেনেই কমন নেটওয়ার্ক সেবাদাতারা যেনো বিটিআরসি’র গাইড লাইন মেনে চলেন এবং অবকাঠামো ও অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সেবাদাতারা সীমনার মধ্যে থেকেই সেবা দেন সে বিষয়টি আশা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। লাইসেন্সের বাহুল্য এক্ষেত্রে বড় শঙ্কার বিষয় বলে মনে করেন টেলিকম বিশেষজ্ঞরা। লাসেন্সের চেয়ে সেবার মানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। দাবি তুলেছেন, লাইসেন্সের সীমা বেধে দিয়ে শঙ্খল না শৃঙ্খলা বিধানের মাধ্যমে তৃণমূলে সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার। তাদের মতে, মুখোমুখি অবস্থানে না থেকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য কমানো সম্ভব।
সোমবার সকালে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ টিআরএনবি আয়োজিত ‘আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের গুরুত্ব’ বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে।
রবি আজিয়েটার করপোর্টে অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহদ আলম বলেন, ২০০৯ সালে এনটিটিএন চালু করা হয়। ওই সময় আমরা ৩জি আনতে চাইনি। কিন্তু সরকারের চাপে আনতে হয়। এখন পুরো বিশ্বেই এটি অবসুলেট। আমরা এখন আমরা ৪জি করছি। এখন এনটিটিএন চলছে একভাবে। আমরা চলছি আরেক পথে। ২০১৯-২০২৪ সালে এসে ফাইবার ডেভেলপমেন্টে আমরা ৯৩টি দেশের মধ্যে ৭৭তম।
সামিট কমিউনিকেশনের চিফ নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট (সিএনএ) ফররুখ ইমতিয়াজ বলেন, ফাইবার লেআউটের বিষয় ডাক বিষয়টি ক্লিয়ার না। আমরা এমএনওদের ওটিসি নিয়ে পুরোপুরি চলি না। তাই রিসোর্সস লকইন বিষয়টি যদি দীর্ঘমেয়াদী কাজ করা হয় তবে ইন্টারনেটের মূল্য কমবে। তবে বিনিয়োগ সুরক্ষায় এখানে উইন উইন সিচুয়েশন থাকা দরকার।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান বলেন, মোবাইল অপারেটরদের জন্য ফাইব কাঁচামাল। বাংলাদেশের সঙ্গে শুধু মাত্র নাইজেরিয়োয় নিষিদ্ধ। ফলে মোবাইল অপারেটররা অনেক সেবাই দিতে পারছে না।
অভিযোগের জবাবে ফাইবার অ্যাট হোম চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন, এসব অভিযোগ শুনে আমি অবাক হয়েছি। বিশেষ পরিস্থিতিতে এনটিটিএন’র জন্ম। তখন দুইটি টেলিকম অপারেটর, পিজিসিবি ও রেলওয়েই ছিলো টেলিকম নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির কাজ। কিন্তু তারা নেটওয়ার্ক শেয়ার করতে চাইতো না। আজ ১৬ বছর ধরে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে কমন নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছে এনটিটিএন। আইএসপিরা যেনো তৃণমূলে নিয়ে যেতে পারে সে জন্য আমরা কাজ শুরু করি। সবগুলো উপজেলায় নেটওয়ার্ক নিয়ে যাওয়াটা খুবই কঠীন কাজ। এখন মনে হচ্ছে সব সমস্যার গোড়া এনটিটিএন। তারপরও গণশুনানিতে প্রোপার গাইডলাইন পেলে আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে থাকতে চাই। এজন্য আমরা বারবার অপারেটরদের সঙ্গে বসেছি। এরপরও আমি উত্থাপিত সব প্রশ্নেরই লিখিত উত্তর দিতে পারবো। একসঙ্গে কাজ করলে সল্যুশন আসবে। কমন নেটওয়ার্কের কারণে ট্রান্সমিশন খরচ ১০০ ভাগ কমানো সম্ভব হয়েছে। প্রয়োজন হলে, ওভারহেড ফাইবার রিমুভ করতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। এক্ষেত্রে সমাধান এফটিটিএইচ। কিন্তু এটা আইসপি’রা ব্যবহার করছে না। এর ব্যবহার বাড়ালে সুফল পাওয়া যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার বলেন, মোবাইলে প্রচুর কল ড্রপ হয়। অনেক জায়গায় আমরা সংযোগও পাই না। তাই আমরা কোন সেবাটি মোবাইল এবং কোন সেবাটি আইএসপি থেকে পাবো তা স্পষ্ট করা দরকার। আমাদের ইন্টারনেট ছাড়াও অনেক সেবা পাই। তাই অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক একক ফাইবার বা ফাইবার শেয়ারিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে। অপারেটরদের অবশ্যই নতুন নতুন সেবা নিয়ে ভাবতে হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী’র সভাপতিত্বে টেলিটক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মা’বুদ চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার, এমটব মহাসচিব মোঃ জুলফিকার, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক প্রমুখ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবি সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী। সংগঠনের সভাপতি সমীর কুমার দে’র সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারাদেশে সরকারি বেসরকারি মিলে সারাদেশে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছে। আর এ নেটওয়ার্কের ফলে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট ভিত্তিক সকল সেবা ছড়িয়ে পড়েছে।