ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মুনাফার সব সূচক ইতিবাচক হলেও চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের চেয়ে ৫ শতাংশ আয় কমেছে মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়েটার। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রবি মোট আয় করেছে ২ হাজার ৪৭৪ দশমিক ৪ কোটি টাকা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নজিরবিহীন ১৫ দিনের মতো ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং পরে ভয়াবহ বন্যার কবলে ডেটায় আয় কমে যাওয়ায় অপারেটরটির আয়ে ভাটা পড়ে বলে প্রতীয় মান হয়েছে। বুধবার ( ৩০ অক্টোবর) প্রকাশিত চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রবি’র আয় গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায়২ দশমিক ৭ শতাংশ কমলেও বছরের প্রথম নয় মাসে মোট আয় করেছে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে ভয়েস কল থেকে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু ডেটা বা ইন্টারনেট সেবা থেকে আয় কমেছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ভয়েস সেবা থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ইন্টারনেট সেবা থেকে রাজস্ব কমেছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ।
সার্বিকভাবে নেতিবাচক আর্থিক পরিস্থিতির কারণে রবি’র সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭৯ লাখে। সক্রিয় গ্রাহকদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখ। এর মধ্যে ৩ কোটি ৭0 লাখ গ্রাহক ফোরজি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। মোট সক্রিয় গ্রাহকের প্রেক্ষিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের হার ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ফোরজি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৬৪ শতাংশ। দশ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমে যাওয়া সত্ত্বেও মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে রবি সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রবি’র কর পরবর্তী মুনাফার হয়েছে ১৮৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বছরের প্রথম নয় মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) প্রেক্ষিতে এ সংখ্যা ৪০২ কোটি ৮০ লাখ টাকা যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩৪ শতাংশ বেশি। তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় শূন্য দশমিক ৩৬ টাকা যা গত প্রান্তিকের তুলনায় ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ মার্জিনসহ সুদ, কর, অবচয় ও অ্যামোর্টাইজেশনের (ইবিআইটিডিএ) আগে আয়ের পরিমাণ ১ হাজার ৩৪০ দশমিক ১ কোটি টাকা। প্রথম নয় মাসে ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ মার্জিনসহ ইবিআইটিডিএ’র পরিমাণ ৩ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৪ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় ইবিআইটিডিএ ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ইবিআইটিডিএ মার্জিন পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ দশমিক ২ পার্সেন্টেজ পয়েন্টস।
গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ইবিআইটিডিএ ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এটি কোম্পানির পরিচালনগত দক্ষতারই প্রতিফলন। কারণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আয় কমলেও এ অর্জন নিশ্চিত করেছে কোম্পানিটি।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১৪৯ দশমিক ২ কোটি টাকা মূলধনী বিনিয়োগসহ বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানির মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯২ দশমিক ৩ কোটি টাকা।
তৃতীয় প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৩৪৬ দশমিক ১ কোটি টাকা যা কোম্পানির মোট রাজস্বের ৫৪ শতাংশ। প্রথম নয় মাসে জমা দিয়েছে ৪ হাজার ৬৪০ দশমিক ৮ কোটি টাকা, যা একই সময়ে অর্জিত রাজস্বের ৬১ শতাংশ।
রবি’র আর্থিক ফলাফল নিয়ে কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও রাজীব শেঠি বলেন, “সব দিক থেকে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়টি আমরা অনিশ্চয়তায় কাটিয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের সময় ১১ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং এরপর ভয়াবহ বন্যা অর্থনীতির জন্য ছিল এক বড় আঘাত। বিপুল সংখ্যক গ্রাহক আমাদের নেটওয়ার্ক ছেড়ে যাওয়ায় স্বভাবতই আমাদের রাজস্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শেষ পর্যন্ত আমাদের কার্যকর ব্যয় ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির বদৌলতে আমরা কিছু মুনাফাসহ ভালভাবে এই প্রান্তিকটি শেষ করতে পেরেছি।”
টেলিযোগাযোগ ইকোসিস্টেমকে নতুন করে সাজানোর লক্ষ্যে সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক গৃহীত সংষ্কার কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান রাজীব। উভয় পক্ষের জন্য উপযোগী একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সংস্কারের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সার্বিক সহযোগিতার সংকল্প ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের কর ব্যবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সরকারকে মোট রাজস্বের ৬১ শতাংশ প্রদান করেছে রবি। তিনি বলেন, এমন করের বোঝা দেশ সেরা নেটওয়ার্ক গড়তে বিনিয়োগের জন্য কোম্পানির আর্থিক সামর্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।