অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকা দিলো দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে অপারেটরটির শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে প্রদত্ত লভ্যাংশের নির্ধারিত অংশ বাবাদ ২৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪২ টাকার একটি ডামি চেক হস্তান্তর করা হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার হাতে চেকটি তুলে দেন গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার সৈয়দা তাহিয়া হোসেন। প্রদানকৃত অর্থ প্রতিষ্ঠানটির ২০২৩ সালের ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডের (ডব্লিউপিপিএফ) ১০ শতাংশ।
এসময় শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তরিকুল আলম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ফাহমিদা আখতারসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গ্রামীণফোনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের হেড অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস অ্যান্ড কালচার মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, কম্পেন্সেশন অ্যান্ড বেনিফিটস প্রধান মোহাম্মদ খালেদ মৃধা, সিনিয়র ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস এক্সপার্ট মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস এক্সপার্ট মো. হারুন অর রশিদ।
এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ২৮৫ জন শ্রমিককে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখন তহবিলে জমা আছে এক হাজার ২৬ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের জন্য যে একটি শ্রম কল্যাণ তহবিল আছে তা অধিকাংশ শ্রমিকই জানে না। কিভাবে এই তহবিলে আবেদন করতে হয়, কিভাবে অর্থপ্রাপ্তি হয় এই সম্পর্কে শ্রমিকদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় এই তহবিলের অব্যবস্থাপনা হয়েছে। আমরা এই তহবিলের অর্থ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে সঠিকভাবে শ্রমিদের পৌঁছে দিতে চাই। আমরা এই ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে ডিজিটালাইজড করার কাজ করছি।
উপদেষ্টা বলেন, যে সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এই তহবিলে অর্থ প্রদান করেন না তাদেরকেও এই তহবিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সকল প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কাজ করা হচ্ছে। আমরা শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছি এবং সামনের দিনেও তা অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার (সিএইচআরও) সৈয়দা তাহিয়া হোসেন বলেন, “ দায়িত্বশীল কর্পোরেট নাগরিক হিসেবে নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন গ্রামীণফোন। আমাদের প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র কানেক্টিভিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং আমরা বৈচিত্র্যময় এবং ডিজিটালভাবে দক্ষ ভবিষ্যৎ-উপযোগী কর্মী তৈরি ও তাদের ক্ষমতায়নের জন্য সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রদানকৃত অর্থ সকল কর্মীদের নিরাপত্তা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার প্রতি গ্রামীণফোনের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। আমরা বিশ্বাস করি যে, সম্মিলিত প্রচেষ্টা সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল পরিবেশে সফলভাবে কাজ করতে পারার পাশাপাশি সবার জন্য আর্থিক সমৃদ্ধি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর।”
এছাড়াও শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা শ্রমিকদের জন্য সুখবর দিতে চাই। শ্রমিকদের ১৮ দফার মধ্যে একটি বিশেষ দফা ছিল তাদের রেশনের বিষয়। সেটা নিয়ে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। আজ আমরা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ১ অক্টোবর আশুলিয়ায় টিসিবির পণ্য শ্রমিকদের বিতরণের জন্য উদ্বোধন করবো। টিসিবির আওতায় এক কোটি পরিবারের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে শ্রমঘন এলাকায় আমরা বাড়াবো। উপদেষ্টা উপস্থিত হয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। আমরা ৪০ লাখ শ্রমিককে পর্যায়ক্রমে টিসিবির ন্যায্য মূল্যের পণ্য দেব।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শ্রম আইনের অধীনে স্থানীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বছর শেষে তাদের লাভের ৫ শতাংশের এক-দশমাংশ শ্রম কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়। যাত্রা শুরুর পর থেকে একটি দায়িত্বশীল কর্পোরেট কোম্পানি হিসেবে এবং শ্রম কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলের অন্যতম শীর্ষ অবদানকারী শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে এখন পর্যন্ত মোট ২৩৯ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৬০৩ টাকা জমা দিয়েছে গ্রামীণফোন।