বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মতো পর্যবেক্ষণের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ না করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন। এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
রোববার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তরের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার অফিস কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় উভয়ে একে অপরের প্রতি এই আহ্বান জানান।
বৈঠকে রোরি মুঙ্গোভেন অন্তবর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে তরুণেরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তাতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এ ঘটনাটিকে বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন তিনি। সত্য ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তারা সর্ব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও জানান রোরি মুঙ্গোভেন।
প্রতিনিধি দলের অপর সদস্য, জাতিসংঘের বাংলাদেশস্থ আবাসিক অফিসের সমন্বয়ক দলের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান আন্দোলনের সময় সংগঠিত ঘটনাগুলোর তথ্য প্রমাণ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এজন্য তিনি বাংলাদেশের আইন, স্বরাষ্ট্র এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত ভাবে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন। এতে করে ভবিষ্যত তদন্তে ও দোষীদের আইনের অধীনে আনতে এভিডেন্সগুলো সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগানো সহজ হবে।
এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওটিটি প্লাটফর্মে আগের সরকারের মতো পর্যবেক্ষণের নামে নিয়ন্ত্রণ না করার অনুরোধ করেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা। প্রয়োজনে এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সরকারের সাথে কাজ করার জন্য প্রেরণ করারও অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তারা।
অপরদিকে সংস্কার আন্দোলন দমনে মানবাতা বিরোধী অপরাধীদের স্বরূপ উন্মোচনে জাতিসংঘ এগিয়ে আসায় সাধুবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে, সর্বস্তরের জনগণ কে আমরা সাথে পেয়েছি। এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশবাসী প্রতি আমাদের কিছু কমিটমেন্ট তৈরি হয়েছে আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রেখে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার, আন্দোলনে আহত নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন ও দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা দেয়া এবং আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করা এই তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পুরো সময়টা জাতিসংঘ এবং হিউম্যান রাইটস সংগঠনগুলো আমাদের সাথে ছিল এজন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা তাদেরকে পূর্বেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম, বিগত সরকার চূড়ান্ত ক্র্যাক ডাউনের দিকে যাবে; পরে সত্যিই তেমনটা ঘটেছে। আমরা চাই, জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানুক- আন্দোলনের এই সময়ে বাংলাদেশে কি কি ঘটেছে, আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার প্রতি কতটা নৃশংস ছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ।
অপরদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের যুব সমাজের ক্রীড়া প্রতি আগ্রহ রয়েছে। পূর্ববর্তী আওয়ামীলীগ সরকার ক্রীড়াঙ্গনে সর্বস্তরে দুর্নীতি করেছে। আমাদের সরকার ক্রীড়াঙ্গনকে দুর্নীতি ও রাজনীতি মুক্ত করার কাজ করছে।
তিনি বলেন, দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের রেজিস্টার্ড ৮৫০০ টি যুব সংগঠন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। উপদেষ্টা বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর তাজরীন ফ্যাশন এবং রানা প্লাজা ট্রাজিডিতে হতাহতদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক সচল রাখতে অন্যতম হাতিয়ার আমাদের শ্রমিকরা কিন্তু আমাদের শ্রমিক ভাইরা তাদের অধিকার তাদের ন্যায্য অধিকার প্রপ্তিতে বঞ্চিত। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। তাদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের এই প্রতিনিধি দলের বৈঠকে ওএইচসিএইচআর মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা অ্যালেক্সজান্দ্রা জেমস আমিল এল জুনাইদ এবং জাতিসংঘের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা লিভিয়া কসেনাজা উপস্থিত ছিলেন।