বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রায় বায়োটেকনোলজি বা জীবপ্রযুক্তি বড় ভূমিকা রাখলেও নীতি নির্ধারক পর্যায়ে বরাবরই উপেক্ষিত ছিলো দেশের কেন্দ্রীয় জীবপ্রযুক্তি সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি (এনআইবি)। এবার এই ট্যাবু ভেঙ্গে এবারই প্রথম সংস্থাটির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগে পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ শাহেদুর রহমান।
এর পর থেকেই দলমত নির্বেশেষে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। রবিবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় শতাধিক শিক্ষক তার নিয়োগে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন। নেটওয়ার্ক অব ইয়ং বায়োটেকনোলজিস্ট অব বাংলাদেশে (এনওয়াইবিবি), বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েটস (বিএবিজি) এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের এলামনাই এসোশিয়েশন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আবু রেজা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আদনান মান্নান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আহসান হাবীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ডঃ মুশতাক ইবনে আয়ুব,
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মিন্নাতুল করিম আখন্দ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আমজাদ হোসেন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মাসুদার রহমান, মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ নাজমুল হাসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ডঃ মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষকেরা এসময় চব্বিশের গনঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ’খানেক আন্দোলনকারী ছাত্রকে যখন পুলিশ আর সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হয় তখন তারা এই শিক্ষক পার্শ্ববর্তী অরুনাপল্লিতে ছাত্রদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়ে প্রাজ্ঞ অভিভাবকত্বের প্রশংসাও করেছেন।
তাদের মতে, দেশের কেন্দ্রীয় জীবপ্রযুক্তি সংস্থা “ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি (এনআইবি)” তে প্রয়োজন বায়োটেকনোলজি থেকে পড়াশোনা করে আসা, এই বিষয়ে গবেষনায় অভিজ্ঞ এমন একজন ব্যক্তি। এক্ষেত্রে সবার আগে যার নাম আসবে তিনি হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ শাহেদুর রহমান। তিনি করোনা’র সময় দিনের পর দিন মন্ত্রনালয়ে গিয়ে বসে থেকেছেন যেন জীবপ্রযুক্তিবিদেরা আরটিপিসিয়ার এর দক্ষতা দেশের জন্য কাজে লাগানোর সুযোগ পায়, পাবলিক সার্ভিস কমিশনে গিয়ে অসংখ্য বৈঠক করেছেন কেবলমাত্র এটা বোঝানোর জন্য যে স্কুল কলেজে আমাদের গ্রাজুয়েটরা জীববিজ্ঞান পড়ানোর জন্য যথেষ্ট যোগ্য, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তকে সেমিনারে ডেকে অনুধাবন করিয়েছেন কিভাবে এই ক্ষেত্রেও জীবপ্রযুক্তিবিদেরা দেশের কাজে লাগতে পারে। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিলেবাস প্রনয়ন কমিটির একজন এক্সপার্ট সদস্য তিনি। তিনি দেশের প্রথম বায়োটেক গ্রাজুয়েট। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটস (BABG)-এর দায়িত্ব পালন করেছেন , যা নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে একটি দৃশ্যমান সংগঠনে পরিণত হয়েছে। জীবপ্রযুক্তি কমিউনিটি মনে করে অধ্যাপক শাহেদুর রহমান NIB-কে সত্যিকার অর্থে দেশের জীবপ্রযুক্তির বিকাশে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, কোভিড পরবর্তি সময়ে এর গুরুত্ব পুরো বিশ্ব বুঝলেও বাংলাদেশে জীবপ্রযুক্তি নিয়ে ছিল কেবলই ফাঁকা বুলি! গবেষণায় বিশেষ কোন অনুদান আসেনি, গবেষণা সংস্থাগুলোতে যন্ত্র কেনা ছাড়া সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি, বিদেশ থেকে এদেশের মেধাবীদের ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি, দেশের অভ্যন্তরীণ কৃষি, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সমস্যা এই প্রযুক্তি-কে ব্যবহার করে সমাধানের জন্য বিশেষ কোন সফল প্রকল্পও সরকারীভাবে দেখা যায়নি। এর পেছনের কারন একটাই নেতৃত্বে সবসময় ছিলেন হয় এই বিষয় সংশ্লিষ্ট নন এমন আমলা কিংবা আন্তরিকতাবিহীন কেউ। দুঃখজনক হল, এই বিষয়ে পারদর্শী ছাত্রছাত্রী যারা পাঁচ বছর এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে, তাদেরকেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কিংবা চাকুরির ক্ষেত্রে আবেদনের সুযোগই দেয়া হয় না।