ফলোআপ : আসিটি’ র ১৫ বছরের প্রকল্প মূল্যায়নে গঠন করা হয় সাত সদস্যের কমিটি। সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আইসিটি বিভাগে বৈঠকে বসেন তদন্তকর্মকর্তারা। মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
বিগত ১৫ বছরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন ৪৯টি প্রকল্পের সামগ্রিক মূল্যায়ন কাজ শেষ হয়েছে। টানা ৯০ দিনের পর্যালোচনা শেষে রোববার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে গত ২২ আগস্ট গঠিত চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।
এই কমিটির সদস্যরা হলেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ প্রধান) ড. মো. তৈয়বুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ জানে আলম, উপসচিব (পরিকল্পনা-৩) শারমিন সুলতানা এবং সদস্য সচিব জানে আলম।
কমিটি সূত্রে প্রকাশ, প্রকল্পগুলোর সমাপ্তি রিপোর্ট, অডিট আপত্তি, ক্রয় কার্যক্রম এবং কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়নের নানা চ্যালেঞ্জ ও ব্যর্থতার দিক উঠে এসেছে, যা বিভাগের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে সীমিত করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে কমিটি বেশ কিছু কার্যকর সুপারিশ প্রদান করেছে।
এরমধ্যে প্রকল্পের আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়মিতভাবে জমা দেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প পরিচালকের দক্ষতা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকল্প অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গেই পরিচালকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরি বলে মত দিয়ে তদন্ত কমিটি। বাকি উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- প্রকল্প গ্রহণের সময় অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ এবং সঠিক সমীক্ষার মাধ্যমে চাহিদা ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করা; অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা এড়াতে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ; প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নিয়মিত পরিদর্শন এবং মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।
প্রতিবেদন বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রকল্প গ্রহণের সময় যথাযথ সমীক্ষা এবং অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শের অভাবে অনেক প্রকল্পের কার্যপরিধি ও নকশা বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফলে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করেছে এবং প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। কিছু প্রকল্পের আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক প্রভাব সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। এ কারণে প্রকল্পগুলো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক প্রকল্পের অডিট আপত্তি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি, যা আর্থিক স্বচ্ছতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তদুপরি, বেশ কিছু প্রকল্পের প্রকল্প সমাপ্তি রিপোর্ট (PCR) জমা না দেওয়ার কারণে প্রকল্পের কার্যকারিতা নিরূপণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উন্নয়ন কার্যক্রমের সফলতা নির্ভর করছে পরিকল্পনা, কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আর্থিক স্বচ্ছতার উপর। কমিটির প্রতিবেদন বিভাগের উন্নয়নে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে- যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, জুলাই ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতায় বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর দুর্নীতি, অনিয়ম, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় মূল্যায়নের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।