ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি)-সোর্স কোড মুছে ফেলে বদলে ফেলা হয়েছে পাসওয়ার্ড। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে এই অপকর্মটি করেছেন এনটিএমসি’র সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) জিয়াউল আহসান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এমন বিস্ফোরক খবর দিয়েছেন ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিনের সাংবাদিক মরিয়ম চম্পা।
খবরে প্রকাশ, গোপনে অপারেটরগুলোর মোবাইল ফোনের সফটওয়্যারে ঢুকে বিভিন্ন সময়ে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালাতো ন্যাশনাল এনটিএমসি। পাসওয়ার্ড বা সোর্স কোড উদ্ধার করতে না পারায় বর্তমানে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফোন কল রেকর্ড (পিসিআর) সংগ্রহ করে কাজ চালাচ্ছেন এনটিএমসিতে কর্মরত একাধিক সংস্থার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এনটিএমসি সূত্র জানায়, গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর এনটিএমসিতে রীতিমতো ধ্বংসযোগ্য চালিয়েছেন জিয়াউল। সোর্স কোড নষ্ট করার পাশাপাশি অপারেটরের হার্ডওয়ার কাঠামো ব্যতীত গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। যাতে করে বিগত সরকারের আমলের অপকর্মের গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য ফাঁস না হয়।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জিয়াউল আহসানকে আরেক দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ । বর্তমানে গোয়েন্দা কার্যালয়ে বন্দি সংখ্যা অনেক বেশি। তিনটি কক্ষের সবগুলোই আসামিতে পূর্ণ। পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তাকে রিমান্ডে আনতে আদালত বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাকে পুনরায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর সংলগ্ন এনটিএমসি কার্যালয় অবস্থিত। গত ৬ই আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয় এনটিএমসি’র ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে। গ্রেপ্তারের আগে অনেকটা সময় পর্যন্ত এনটিএমসি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। এসব বিষয়ে রিমান্ডে জিয়াউল আহসানকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে খবর রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এনটিএমসি’র মাস্টারমাইন্ড জিয়াউল আহসানের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী থেকে শুরু করে বড় বড় রাজনৈতিক নেতা, সেনা কর্মকর্তারা তার কাছে ছিল জিম্মি। কথায় কথায় তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাজনৈতিক ফোনালাপ ফাঁস করার হুমকি দিয়ে নানা ভাবে সুবিধা আদায় করতেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এনটিএমসিতে টাস্কফোর্স হিসেবে ডেপুটেশনে থাকা বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত নির্দিষ্ট সংখ্যক নিজস্ব কর্মকর্তার সমন্বয়ে এনটিএমসি পরিচালিত হয়। গোয়েন্দা হেফাজতে থাকাকালীন দফায় দফায় মেজর জিয়াউল আহসানকে এনটিএমসি’র (পাসওয়ার্ড) সোর্স কোড সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি, মনে নেই, ভুলে গেছি, হারিয়ে গেছেসহ একেক সময় একেক বক্তব্য প্রদান করেছেন। এদিকে সরকার পতনের আগে এবং পরে যতটুকু সময় পেয়েছেন এই সময়ের মধ্যে জিয়াউল আহসান গুরুত্বপূর্ণ ডেটাবেজ নষ্টসহ তার মিশন সম্পন্ন করেন। এনটিএমসিতে কর্মরত এক সূত্র জানায়, মূল সোর্স কোড না থাকায় তারা বিভিন্ন সিম কোম্পানির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পিসিআর সংগ্রহ করে কাজ চালাচ্ছেন। এতে করে সময় বেশি লাগছে। এ ছাড়া সিম কোম্পানিগুলো অনেক সময় তাদের সহযোগিতা করছেন না। সোর্স কোড না থাকায় বর্তমানে, এনটিএমসিতে কর্মরত সদস্যদের পৃথক পৃথকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
এর আগে সকল বাহিনীর সমন্বিত ড্যাটাবেজ একসঙ্গে করে কাজ করার সুযোগ ছিল। এখন সেটা ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সোর্স কোড নষ্ট করে ফেলায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরের দেশের লোকদের হাতে চলে যেতে পারে। এতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে অসংখ্য গুম খুনের সঙ্গে জড়িত সাইলেন্ট কিলার জিয়াউল আহসানের মোবাইল ফোনে অনেক অপকর্মের তথ্য থাকলেও তাকে গ্রেপ্তারের সময় তার মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনি গোয়েন্দা সংস্থা।