নেতা নয়; মাঠের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি জাতীয় উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। অপরদিকে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্ধ করা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ফের চালু করতে নাগরিক সমাজকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিটিআরসি কমিশনার মাহমুদ হোসেন।
বৈষম্যহীন উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবাহর নিয়ে শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘নতুন করে যাত্রা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এই দুইটি বার্তা দিয়েছেন তারা। টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি পলিসি এডভোকেসি প্লাটফর্ম (টিপঅ্যাপ) আয়োজিত এই সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া।
দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী এসোসিয়শনে প্রকৃতি ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এই কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও প্রযুক্তি খাতের সংস্কারে লিখিত ২০টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন অপর দুই সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর ও ফিদা হক।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চার্চিলের একটি উধ্বৃতিকে সামনে রেখে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, একটা ভালো বার্তা হলো সরকার এখন জনগণের কথা শুনছে। কেউ কিছু বললে কোথাও হারিয়ে যেতে হবে সেই ভয় এখন নেই। তাই ক্লাসিক অ্যাসোসিয়েশন নয় আমরা এমন একটা উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করছি সেখানে জেনুইন বিজনেসম্যান থাকবে। এরকম অনেক অ্যাসোসিয়েশন আছে যেখানে আসলেই কমিউনিটিকে প্রতনিধিত্ব করেন এবং জেনুইনি বিজনেসম্যান তারা নেতৃত্বে নেই। তাই সেখাখান থেকে সরকারের কাছে আসা তথ্য-উপাত্ত সরকারকে সঠিক বার্তা দেয় না। তাই আমরা সিঙ্গাপুরের ইটিবি’র মতো বিডাতেও একটি বিজেনেসম্যান অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল করতে চাই। কিছুদিনের মধ্যেই এই বোর্ড গঠন করা হবে। আমরা এখানে একটা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই।
অপরদিকে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্ধ করা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ফের চালু করতে নাগরিক সমাজকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিটিআরসি কমিশনার মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নামে নিয়ন্ত্রক হলেও সাংবাধিনিক ভাবে সংশ্লিষ্ট খাতের সুবিধাজনক পরিবেশ সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি। বাজারে মূল্য প্রতিযোগিতা সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষায় ও উৎপাদনশীলতায় ইন্টারনেটের ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হয়। তাই নাগরিক সেবায় মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে সেট লক সিস্টেম চালু এবং কল ও ডাটার ক্ষেত্রে টোল ফ্রি অ্যাকসেস চালু করতে প্রস্তুত বিটিআরসি। তিবে এ জন্য নাগরিক সমাজ থেকে চাহিদার চাপ থাকতে হবে। বিটিআরসি অপারেটর নয়। ৫জি ছড়িয়ে দিতে বিটিএসগুলোতে ফাইবার স্থাপন করতে হবে। সাইবার সুরক্ষায় আমরা ভূমিকা রাখবো। আইওটিকে ফ্যাসিলেট করতে বিটিআরসি ৬ গিগাহার্জ স্পেকট্রাম রিলিজ করেছে। এভাবেই বিটিআরসি অপারেটরেটরদের ফ্যাসিলিটেট করে। প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। একইভাবে বিটিআরসি এসওএফ কালেক্টর হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও এই তহবিল বরাদ্দের দায়িত্বে নেই। এসব বিষয়ে আলোচনায় আগামী ১৭ অক্টোবর একটি কনসাল্টেশন বৈঠক করা হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটির সদস্য আব্দুল আওয়াল উজ্জল অভিযোগ করেন তারা ব্যাংক থেকে রেমিটেন্স ইনসেন্টিভ পাচ্ছে না। তিনি বলেন, কারিকুলাম আপডেট করে ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের চেয়ে দক্ষতা উন্নয়নের ওপর ফোকাস না করা হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি কঠিন হবে। তবে অপর ফ্রিল্যান্সার জাকির হোসাইন প্রশ্ন রাখেন যারা আয় করছে তাদের জন্য কেন ইনসেন্টিভ দিতে হবে? এর জবাবে এ ধরনের কারেজ সত্যি প্রশংসার বলে জানান বিজনেস আউটসোর্সিং ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) তানভীর ইব্রহিম। তবে এটা করা হয়, যেন বিদেশ থেকে আয় করা অর্থ দেশে নিয়ে আসতে আগ্রহী হয়।
আরঅ্যান্ডডি ট্যক্স ক্রেডিট বিবেচনা করা যেতে পারে। ইন্টারনেটকে ডিজিটাল পাবলিক গুডস হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দেন।
কোয়ালিটি অব আইটি স্কিল বিষয়ে এডটেক প্লাটফর্ম গুলো ব্যবহার ও ট্রেইনিং নেয়ার ক্ষেত্রে ন্যারেটিভ চেঞ্জ করতে হবে বলে মনে করেন অন্যরকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ। তিনি বলেন, পরিশ্রম ও ডিসিপ্লিন ওয়েতে এগুতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো পুরোনো কারিকুলামে পড়ানোয় এখনো আমরা সিএস’র বাইরে বিভিন্ন সেক্টর থেকে ডিপ্লোমা করা রিসোর্স বেশি ভালো করছে বলে জানান সোশিয়ান সিইও তানভীর সৌরভ।
ইজিপি দুর্নীতি রোধ করতে পারেনি বরং সরকারি কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি অপর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন ডিনেট সিইও অনন্য রায়হান। আইটি খাতে অনেক বাজেট দেওয়া হলেও পাইপ লাইন তৈরি না হওয়ায় কাজ করছে না বলে মনে করেন ব্রেইন স্টেশন সিইও রাইসুল কবির। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করেও সিঙ্গাপুরে গিয়ে ব্যবসায় নিবন্ধন করতে হয়। দেশে কোনো কোম্পানি সাস প্রোডাক্ট করবে তার আইনি কাঠামো নেই। বক্তারা মনে করেন, কোলাবেরেশন ও কো-অর্ডিনেশন, কনসিস্টেন্সি ও ক্রেডিবিলিটি না থাকায় উদ্যোগগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে।