রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে আইটি খাতের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের নামের তালিকা সহ মঙ্গলবার দুপুরে অভিযান চালিয়েছে ছাত্ররা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সহ-সমন্বয়ক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদের নেতৃত্বে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্র ও বিভিন্ন শ্রেণীর আইসিটি পেশাজীবীরা এতে অংশ নেন।
জানা যায়, প্রতিনিধি দলটি শুরুতেই বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের দুর্নীতির তালিকা সহ সংস্থাপর নির্বাহী পরিচালক রনজিৎ কুমারের সাথে দেখা করতে যান। আইসিটি টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় তার কার্যালয়ে না পেয়ে ৪র্থ তলায় সিনিয়র সচিব সামসুল আরেফিনের কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিনিধি দলটি বিসিসি নির্বাহী পরিচালকের কাছে সর্বশেষ নিয়োগ পরীক্ষাটি গতানুগতিক নিয়ম অনুযায়ী বুয়েটের মাধ্যমে না নিয়ে কেন বিসিসের মাধ্যমে নেওয়া হয় জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া এজ (EDGE) প্রকল্প, জাতীয় ডাটা সেন্টারসহ বিসিসি ও তার অধীনস্থ প্রকল্পসমূহের দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে এসময় রণজিৎ কুমার বলেন “আমার বড় প্রকল্পসমূহের সাইনিং অথোরিটি নই, এ বিষয়গুলো সচিব মহোদয় এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী দেখতেন।” তবে প্রতিনিধি দল উত্তরে সন্তুষ্টা না হওয়ায় তাকে আগামীকালকের মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি , ছাত্র ও পেশাজীবীরা আইসিটি’র দুর্নীতিবাজদের তালিকা করে।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রদের অভিযানের খবর পেয়ে দুর্নীতিবাজদের তালিকায় থাকা এজ (EDGE) প্রকল্পের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট ও সরকারের উপসচিব মো: তোফায়েল হোসেন, এনালিস্ট (নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি) ও প্রকল্প পরিচালক বিশ্বজিৎ তরফদার, ম্যানেজার (ইন্টার্নশীপ) মোঃ মাহবুব করিম, আঞ্চলিক পরিচালক মধুসূদন চন্দ্র সহ অন্যরা কার্যালয় ত্যাগ করেন।
এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আইসিটি উদ্যোক্তা কাউন্সিলের অন্যতম সমন্বয়ক বুয়েট শিক্ষার্থী তালহা ইবনে আলাউদ্দিন বলেন, “রনজিৎ কুমার সাহেব ইনফো সরকার তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের ২৬০০ ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পিপিপি চুক্তিতে সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন। বুয়েট কর্তৃক ফিজিবিলিটি স্টাডিতে রেভিনিউ শেয়ার বিসিসির ৪০% এবং প্রাইভেট কোম্পানির ৬০% প্রস্তাব করা হলেও তা না মেনে তিনি রেভিনিউ শেয়ার বিসিসির ১০% এবং প্রাইভেট কোম্পানির জন্য ৯০% নির্ধারণ করেছেন। ২০ বছর মেয়াদী এই চুক্তির মাধ্যমে পলক ও রনজিত গংদের পকেট ভারি হলেও সরকার প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে”।
এ বিষয়ে রণজিৎ কুমার ডিজিবাংলা-কে বলেন, আমি সরকারি কর্মচারী। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। সরকারি নিয়ম মেনেই সব কাজ করেছি। তারা পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছে। জানিয়েছে, ওই পরীক্ষায় আমার এক আত্মীয় চাকরি পেয়েছে। তবে ওই পরীক্ষায় শুধু আমার ভাগ্নে নয় আরো ২৪ জন চাকরি পেয়েছে। আর পলিসি লেভেলে যা হয়েছে তা প্রতিপালন করা আমার দায়িত্ব ছিলো। আমি একা তা করিনি। আর এজ প্রকল্পে আমি হোপ। পুরো বিষয়টি বিশ্বব্যাংক দেখে। টর পরীক্ষা নীরিক্ষা তারাই করে। আমি ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অনুমোদন দিতে পারি।
পদত্যাগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাদের কাছে লিখিত চেয়েছি। তারা তা দেয়নি। তাই আমি তাদের স্যরি বলেছি। সরকার আমারে বদলি করলে ঠিক আছে। আমাকে আপনাদের প্রেসার করাটা ঠিক হচ্ছে না। আমি সরকারের দাস।
জানাগেছে, পরে প্রতিনিধি দলটি এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মামুনুর রশিদ ভূঁইয়ার সাথে দেখা করেন। এ সময় তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশের নামে দুর্নীতি করা এটুআই এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাজেদুল ইসলাম, ফরহাদ জাহিদ শেখ, মানিক মাহমুদসহ প্রায় ১৫ জন কর্মকর্তার নাম ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তালিকা এটুআই পিডির হাতে তুলে দেন। এ সময় তারা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে উল্লেখিত কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড করে তাদের দুর্নীতির তদন্ত এবং বিগত বছরগুলোতে দুর্নীতির সমর্থক না হবার কারণে যাদেরকে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদেরকে অনতিবিলম্বে ফিরিয়ে আনতে আল্টিমেটাম দেন। এই আল্টিমেটার দেয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বিকেলে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।