ভারতকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করে গণতন্ত্রের প্রতি সম্প্রীতি ও সম্মান বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন উপদেষ্টা নাহিদ। বাংলাদেশে চলমান গণজাগরণের সময় কলকাতা ও দিল্লির ছাত্ররা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও দেশটির শাসকগোষ্ঠী এবং হিন্দুত্ববাদী শক্তির আচরণ গণতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতির পরিপন্থী বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ নিজের ভেরিফাইড পেজে তথ্য ও সম্প্রচার এবং টেলকম ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম সেখানে লিখেছেন, বাংলাদেশে চলমান গণজাগরণের সময় কলকাতা ও দিল্লির ছাত্ররা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনার নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ভারতের এই গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ আমাদের বন্ধু। তবে ভারতের শাসকগোষ্ঠী এবং হিন্দুত্ববাদী শক্তিরা এ ধরনের গণতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি চায় না।
তিনি আরো লিখেছেন, ভারতের শাসক গোষ্ঠী বিভাজনের রাজনীতিতে লিপ্ত। তারা একের পর এক বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং এর ছাত্রদের রাজনৈতিক জাগরণকে হুমকি হিসেবে দেখে। ফলে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করছে। ‘সংখ্যালঘু নিপীড়ন’ টার্ম ব্যবহার করে, দিল্লি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও জাতি-পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উপদেষ্টা লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে; তারা আমাদের স্টেকহোল্ডার। বাংলাদেশে চলমান গণজাগরণের সময় কলকাতা ও দিল্লির ছাত্ররা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনার নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ভারতের এই গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষেরা আমাদের বন্ধু। তবে ভারতের শাসকগোষ্ঠী এবং হিন্দুত্ববাদী শক্তিরা এ ধরনের গণতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি চায় না।
‘শুরু থেকেই আমরা জোর দিয়ে আসছি যে, ভারত সরকারকে বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে দেখা বন্ধ করতে হবে এবং ন্যায়, ন্যায্যতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশ হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার, মর্যাদা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আওয়ামী লীগের আমলেই সংখ্যালঘুরা সর্বোচ্চ নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছিল, তবুও দিল্লি নিঃশর্তভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যদিও ভারত তার নিজস্ব সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিপীড়নকারী দল আওয়ামী লীগকে আশ্রয় ও সমর্থন দিয়েছে এবং গণহত্যা করেছে’-যোগ করেন তিনি।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা স্পষ্ট করেছেন, গণহত্যা ও শিশু হত্যার জন্য দায়ী পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয় ও সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার মাধ্যমে, ভারত সরকার তার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভারতের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা ভুলে গেলে চলবে না।
নাহিদ ইসলাম আরও লিখেছেন, বিজেপি বাংলাদেশকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করছে। এমনটা হলে তা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে। বাংলাদেশ-বিরোধী এবং মুসলিম-বিরোধী রাজনীতি ভারতের জাতীয় স্বার্থে কাজ করবে না বা এর ঐক্যে অবদান রাখবে না। তাই আমরা ভারতকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করে গণতন্ত্রের প্রতি সম্প্রীতি ও সম্মান বজায় রাখার আহ্বান জানাই।