দেশের ৫টি রাডারের একটি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়ায় অবস্থিত। কিন্তু ৪ বছর ধরে অকার্যকর রাডার স্টেশন। এর ফলে ঘূর্ণিঝড় চিহ্নিতকরণ ও তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে শুধু অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ডাটা-উপাত্ত সংগ্রহ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে সক্ষম এটি। এ ছাড়া পাইলট বেলুন পর্যবেক্ষণ ও গ্রহণের মাধ্যমে আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়ে থাকে।
উপজেলার পৌর শহরের নাচনাপাড়া এলাকার ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক সংলগ্ন ১০ দশমিক ১৬ একর জায়গায় ১৯৬৯ সালে কনভেনশনাল রাডারের মাধ্যমে খেপুপাড়া রাডার স্টেশনের প্রথম গোড়াপত্তন শুরু হয়। এটি ৪০০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল চিহ্নিত করতে সক্ষম। ২০০৮ সালে এই রাডারের উন্নতির ধারাবাহিকতার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক ডপ্লার রাডার সিস্টেম চালু হলে এর কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলতে থাকে। ২০১৮ সাল থেকে এর ত্রুটি দেখা দিলে বিদেশি পর্যবেক্ষক দল রক্ষাণাবেক্ষণ করে তা আবার সচল রাখতে সক্ষম হয়।
২০২০ সাল থেকে এই রাডারের ত্রুটি-বিচ্যুতি ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হওয়ায় সম্পূর্ণ যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জাপানি কৌশলী প্রেরণ করে এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতিনিধি দল রাডারের এন্টিনার সার্ভো-মটারের ত্রুটি পায়। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করার পর আবার সচল হয়। তবে রেডিয়েশনের সিগন্যাল রিসিভিং-এ ফের ত্রুটি দেখা দেয়।
খেপুপাড়া রাডার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ. জাব্বার শরীফ বলেন, রাডারে ত্রুটি পাওয়া যন্ত্রাংশগুলো শনাক্ত করা গেছে। সেই যন্ত্রাংশগুলো এখন সরবরাহ করতে পারছে না বিধায় নতুন করে রাডার স্থাপনের জন্য মতামত প্রদান করেছেন পর্যবেক্ষণকারী জাপানি প্রতিনিধি দল। বর্তমানে কাজটি উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন।
এদিকে বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্খা থাকলে তার পূর্ভাবাস আগে জানতে পারলে নিরাপদে থাকতে পারার জন্য খেপুপাড়া রাডার স্টেশনটি সচল করার দাবি করেছেন উপকূলবাসী। মহিপুর মৎস্য বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. দিদার উদ্দিন আহমের মাসুম বলেন, আমাদের মূলত ব্যবসটি হচ্ছে সাগরভিত্তিক ট্রলার মালিকদের সঙ্গে। এই সব ট্রলার মালিকরা সমুদ্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে সমুদ্রে যায়। আমরা যদি আবহাওয়ার কোনো খারাপ সংকেত আগেভাগে জানতে না পারি সেক্ষেত্রে জেলেদের জানানো সম্ভব হয় না। ইতিমধ্যে অনেক জেলে জান-মাল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
অপরদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাডার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আবার রাডার সচল করার জন্য তারা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আমরা আশা করি এই রাডারটি যত দ্রুত সম্ভব সচল হলে আমাদের উপকূলবর্তী কলাপাড়া একটি দুর্যোগপ্রবণ উপজেলার জন্য ততই ভালো হবে।