ওয়েব ৪.০ বিকাশে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইউএন আইজিএফ
এসডিজি’র আদলে গ্লোবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্ট বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে রিসার্চ পেপার তৈরির তাগিদ দিয়ে ওয়েব ৪.০ বিকাশে সামাজিক উন্নয়ন এবং স্থায়িত্বের জন্য ডিজিটাল রূপান্তরকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (ইউএন আইজিএফ)। মতো আগামী ২৫ বছর ডিজিটাল দুনিয়া পরিচালনা ও শাসন ব্যবস্থাপনা প্রণয়নে বাংলাদেশে কে কাজ করবে, কীভাবে করবে এসব বিষয় দ্রুত ঠিক করতে ফোরামটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (বিআইজিএফ) সঙ্গে যুথবদ্ধ ভাবে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।
সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘের ১৯তম ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (ইউএন আইজিএফ) সহযোগী সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ডিজিটাল গভর্ন্যান্সে বহুপক্ষীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের তাগিদ করা হয়েছে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্মেলনে অংশ নেয়া বিআইজিএফ মহাচিব, মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু বলেছেন, ওয়েব ৪.০ ইন্টারনেট জগতে নতুন একটি প্রযুক্তি আসছে, সে ক্ষেত্রে অনেক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নতুন আইন তৈরি করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ইউএনআইজিএফ বাংলাদেশ আইজিএফ তথা রিজিওনাল আইজিএফ কিভাবে একত্রে কাজ করা যায় সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এটি পৃথিবীর সমস্ত আইন-কানুন ব্যবসা-বাণিজ্যকে ওলট-পালট করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক সমস্ত কিছু ও প্রভাব বিস্তার করছে। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে ওয়েব ৪.০।
গত ১৫-১৯ ডিসেম্বর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাইড লাইন বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়। ইউএন আইজিএফ এর অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রাম এক্সপার্ট মিসেস আঞ্জা গেঙ্গো’র সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সাইবার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন কাঠামো গড়ে তোলা এবং আইজিএফ প্রক্রিয়ায় যুব ও স্থানীয় অংশগ্রহণকে শক্তিশালী করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বৈঠকটি হয়েছে গত ১৮ ডিসেম্বর। এ দিনের অপর বৈঠক হয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (APrIGF) এর চেয়ার অমৃতা চৌধুরীর সঙ্গে। বাংলাদেশ প্রতনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (WSIS) এর সমন্বয়কারী শ্রীমতি গীতাঞ্জলি সাহা ও ডট এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনিফার চুং।
বৈঠকগুলোতে টেকসই এবং সমৃদ্ধ ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে পূরণে মানবতার কল্যাণে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর তাগিদ দেয়া হয়। আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে ডিজিটাল স্পেসে উদ্ভাবনগুলোকে কীভাবে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো যায় এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে জড়িত ঝুঁকিগুলো মোকাবেলার কৌশল প্রণয়ন, প্রযুক্তিবিদ, নীতিনির্ধারক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের যুথবদ্ধ অংশগ্রহণ, সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গ্লোবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্টে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে রিসার্চ পেপার তৈরি বিষয়। ডিজিটাল পৃথিবীতে ন্যায্যতা, সমতা এবং দায়বদ্ধতার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে জোরে শোরে।
এবার বাংলাদেশ থেকে আইজিএফ-এ সরকারি, বেসরকারি পেশাজীবি ও শিক্ষাবিদ সহ ৯ জনের একটি দল অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (বিআইজিএফ) মহাচিব, মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু, ভাইস চেয়ারপার্সন, মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। এছাড়াও আছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের অধ্যাপক, মো. রাকিবুল হক, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ট্রাস্টি মেম্বার মুনির আহমেদ, মাই সফট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনজুরুল হক, আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার, সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাদাত রহমান, গর্ভনেন্স এবং অ্যাডভোকেসি সমন্বয়কারী সৌন্দর্জ কুমার রায়, সাইবার কিশোর ১৩ ২ ১৯ টোল ফ্রি হেল্পলাইনের সহযোগী সমন্বয়কারী মো. হাসিবুল ইসলাম, সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রযুক্তি আউটরিচ সমন্বয়কারী তানজির আরাফাত এবং কিডস ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম এর আহ্বায়ক খন্দকার আয়েশা শাহরিয়ার আনিকা ।
চার দিনব্যাপী এই ফোরামে অংশ নিয়ে আইজিএফে বাংলাদেশ লইয়ার্স ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম এর চেয়ারম্যান খন্দকার হাসান শাহরিয়ার বলেছেন, জাতিসংঘের আইজিএফ সেক্রেটারিয়েটের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, শিশু ও তরুনদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি স্থানীয় স্তরে অংশীদারত্বের মাধ্যমে ইন্টারনেট গভর্নেন্সকে আরও সমৃদ্ধ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয় এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানানো হয়। এ বৈশ্বিক মঞ্চে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণকারীরা ইন্টারনেট গভর্নেন্সের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল সমতা, উদীয়মান প্রযুক্তি এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ছিল প্রধান বিষয়। এবারের আইজিএফের সমাপনীতে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে গ্লোবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্ট বাস্তবায়ন ও ইন্টারনেটের নিরাপত্তা এবং অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী আইজিএফ ২০২৫ সালে অসলো, নরওয়েতে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইন্টারনেটকে আরও নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং রূপান্তরমূলক টুল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য কার্যকর ফলাফলের দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।