বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক অপপ্রচার এবং নাক গলানোর নিন্দা জানিয়ে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমতে পৌঁছেছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেছে তারা।
চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে এই অঙ্গীকার করেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন; ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ; গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি; গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক।
বৈঠকে আরও অংশ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমার ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ চারজন; খেলাফত মজলিসের আমির আব্দুল বাসিদ আজাদ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম; জমিয়তে উলামে ইসলামের সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ ইউসুফি ও মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেনদি।
তিন ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ এ বৈঠকে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিন বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ভারতসহ সারা বিশ্বে যে প্রপাগান্ডা চলছে সেগুলোর বিষয়ে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের করণীয়, আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন অফিস ভাঙচুর ও পতাকা অপমান করা নিয়ে করণীয় এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যে গল্প ও উপন্যাস সারা দুনিয়ায় চলছে তা নিয়ে মতামত।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য পোষণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রও এদেশের ছাত্র-জনতা মিলে মোকাবিলা করবো।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বিভিন্ন বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের ইস্যু তৈরির প্রেক্ষাপটে দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সহযোগিতা চাইতে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) দায়িত্ব এদেশে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। দেশের বিরুদ্ধে পতিত সরকার বিদেশ থেকে যে ষড়যন্ত্র করছে তার বিরুদ্ধে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন।
ষড়যন্ত্র করে দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে দাবি করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছি, ফ্যাসিস্ট সরকারকে যারা সহযোগিতা করছে তাদের ষড়যন্ত্র আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করবো।
অপরদিকে অপপ্রচার মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান। সংলাপের বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘অপপ্রচার মোকাবিলায় আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করবো। আমরা কারও পাতা ফাঁদে পা দেব না। কারও কাছে মাথা নত করবো না, আবার সীমা লঙ্ঘনও করবো না। দু-একদিনের মধ্যে সুখবর পাবেন আশা করি।’
সরকারকে সহযোগিতা করছেন জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
অপরদিকে সব দলমত নির্বিশেষে একটি সমাবেশ করার পরামর্শ এসেছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, প্রস্তাব আকার এসেছে, গোটা জাতি ভারতের অপপ্রচারে বিরুদ্ধে যে ঐক্যবদ্ধ আছে… একটি সমাবেশ করতে পারি কি না সবাই মিলে; পলিটিক্যাল একটি কাউন্সিল করা যায় কি না; নিরাপত্তা কাউন্সিল করা যায় কি না; প্রস্তাবনা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সবার (রাজনৈতিক নেতাদের) একই সুর ছিল- আমাদের মধ্যে মত-পথ-আদর্শের ভিন্নতা থাকবে, আমাদের রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবে, অবস্থার ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু দেশ ও সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক। সবার উপরে দেশ। এ থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হব না, বাংলাদেশকে দুর্বল দুর্বল নতজানু ও শক্তিহীন ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন তৎপরতা চলছে। হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা এসবের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ভারতের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যে আত্মমর্যাদাশীল সাহসী ভূমিকা নিয়েছে, তার প্রশংসা করা হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে সলিডারিটি (সংহতি) প্রকাশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতের এসব প্রচারণার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালীভাবে এবং আরও বেগবানভাবে মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে।