গণমাধ্যমকর্মীদের ভুল সংবাদ এবং গুজব প্রচারে সতর্ক থাকা এবং গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বিদায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানাসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে ডিআরইউর পক্ষে সভায় অংশ নেন যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান(মিজান রহমান), অর্থ সম্পাদক মো: জাকির হুসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, নারী সম্পাদক মাহমুদা ডলি, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ মেজবাহ, কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য হাবিব রহমান, সাঈদ শিপন, মুহিববুল্লাহ মুহিব, রফিক মৃধা ও শরিফুল ইসলাম।
আলাপকালে নাহিদ বলেছেন, সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্য আইনগুলো আমাদের পর্যালোচনার মধ্যে আছে। সংস্কার কমিটিরও প্রধান কাজ হবে আইনগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা করা। যত কম সংখ্যক আইন এবং কম বাধা তৈরি করা যায়, ততই স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভালো।
তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। তারা সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটা রূপরেখা উপস্থাপন করবেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আবার বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতা কিংবা সংবাদমাধ্যম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিভিন্ন অংশীজন একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। এখানে অনেক পরস্পরবিরোধী অংশীজন থাকেন। ওয়েজ বোর্ডের কথাই যদি বলি, তাহলে সম্পাদক, মালিক এবং রিপোর্টাররা একেকজন একেকটা পক্ষ নেবে। সবাই মিলে এক জায়গায় আসতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনের নামে রাজপথে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকা আসলে কি ছিল, কারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, এটা সুস্পষ্ট থাকা উচিত। যদি কেউ ভুল করে থাকে কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয় তাহলে তাকে ভুল স্বীকার করে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। ৫ আগস্টের পর কেউ যদি ভোল্ট পাল্টে ফেলেন, এটা তো হওয়া উচিত নয়। তাকে সত্যটা স্বীকার করা উচিত। সত্যের মধ্য দিয়ে এলেই রিকনসিলেশন সম্ভব।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার আসলে একটি ভিন্ন ধর্মী সরকার। সেই জায়গায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের হয়ত অনেক ভুল থাকবে। আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করলে সেটা আন্তরিকভাবেই নেব। যেকোনো ধরনের সমালোচনাকে আমরা ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছি। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও সেই কথা বলেছেন। গঠনমূলক সমালোচনা হলে সেটি আমাদের জন্য উপকারী হবে, এতে আমরা নিজেদের কাজের প্রতিফলন দেখতে পাই, শুধরে নিতে পারি। সেই জায়গা থেকে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা থেকে আমরা গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি।
গণমাধ্যমে প্রচারিত অসত্য তথ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে অসত্য তথ্য ও গুজব প্রচারের ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। গণমাধ্যমের অন্যতম দায়িত্ব হলো সত্যকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা। সত্য প্রচারে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পূর্বে আবশ্যিকভাবে সত্যতা যাচাই করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর গণমাধ্যমের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের আত্মত্যাগ গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারের উপর গুরুত্বারোপ করেন। ডিআরইউর ভবনের জায়গাটি ডিআরইউর নামে লিজ দেয়ার বিষয়ে সহযোগীতার আশ্বাস দেন তথ্য সচিব।