বাংলাদেশকে আঞ্চলিক বিমান চলাচলের কেন্দ্র (হাব) হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও)। সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ এভিয়েশন সেক্টর সঠিক পথেই হাঁটছে।
ঢাকায় পাঁচ দিনব্যাপী ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ)’ ৫৮তম সম্মেলনের সমাপনী দিনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আইকাও সেক্রেটারি জেনারেল হুয়ান কার্লোস সালাজার। বৃহস্পতিবার হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কার্লোস সালাজার বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সিভিল এভিয়েশন খাতকে এগিয়ে নিতে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো আসলেই অভিভূত হওয়ার মতো। এতে আইকাও অভিভূত, বিশেষ করে এভিয়েশান খাতে নারীর ক্ষমতায়নের আগ্রহ অবশ্যই বিশ্বব্যাাপী প্রসংশিত হবে।
বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এভিয়েশন খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও আইকাওয়ের বিভিন্ন আইনগত গুরুত্বপূর্ণ বিয়য়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে সম্মেলনে। এর আওতায় আমরা একটি ফ্রেমওয়ার্ক সই করেছি। যেখানে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনের সক্ষমতার ভিত্তিতে ট্রেনিং, গাইড ও মাস্টারপ্ল্যান জাতীয় বিষয়গুলোতে আমরা পরামর্শে সহযোগিতা করব। ঢাকার একটি আঞ্চলিক এভিয়েশন হাব হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে তার সংস্থা বাংলাদেশকে সমস্ত নীতি ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
এভিয়েশন খাতে সক্ষমতার পাশাপাশি সঠিক শিক্ষাও প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে কালোর্স বলেন, এর সব দিকেই বাংলাদেশ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ এই খাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারবে। আমরা চাই সাসটেনেবেলিটি, দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যা যা মেনে চলার দরকার তার সবগুলোই বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন খাত পরিপূর্ণভাবে মেনে চলবে। তবেই আরও এগিয়ে যেতে পারবে এই খাত।
দেশের এভিয়েশান খাতে অনেক নতুন এয়ারলাইন্স আত্মপ্রকাশ করার পর থেমে যাওয়ার কারণ কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আইকাও মহাসচিব বলেন- হয়তো অতীতে অনেক কিছু আইকাওর রুলস অনুয়ায়ী বা ভালো করে যাচাই বাছাই না করেই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন এ বিষয়ে কঠোরভাবে শর্তপূরণ করা হলেই কেবল নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান এবং আইকাও’র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক তাও মাও বক্তব্য রাখেন। বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এবারের কনফারেন্স নিয়ে আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের এভিয়েশন সম্পর্কে বিশেষ করে হাব তৈরিতে বেশ আশাবাদী। এ জন্য আইকাও’র তরফ থেকে যতটা সম্ভব প্রশিক্ষণ, গাইডলাইন ও মানদণ্ড বজায় রেখে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের উদীয়মান অর্থনীতিকে আরও জোরদার করার জন্য এভিয়েশান খাতের বড় ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইকাও দেশের সিভিল এভিয়েশন কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেবে, যাতে তারা একটি এভিয়েশন হাব হয়ে ওঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারে।
পাঁচ দিনের ওই সম্মেলনে সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নিয়েও আলোচনা করেন বিভিন্ন দেশের সিভিল এভিয়েশন প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালকে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধাসহ অবিশ্বাস্য অবকাঠামো হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ কীভাবে এই নতুন সুযোগ-সুবিধাগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে সে বিষয়ে সম্মেলনে তারা আলোচনা করেন। আইকাও প্রতিনিধিরা বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল একটি আঞ্চলিক হাব হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
এর আগে গত রোববার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৭ দেশ এবং ১৩ টি আন্তর্জাতিক সংস্থার ৫০০ এভিয়েশন প্রতিনিধিদের নিয়ে ডিজিসিএ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।