আগামী ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় বসবে এশিয়া প্যাসেফিক নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের ৫৭তম সম্মেলন। রীতি অনুযায়ী, এই সম্মেলনকে বলা হয় এপ্রিকট সম্মেলন। সিঙ্গাপুরের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার- এপনিকের ৫৪তম সম্মেলনের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেয়া হয়। এসময় জানানো হয় আগামী ফেব্রুয়ারিতে মেনিলায় এবং জুলাইতে জাপানে অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের পরবর্তী এপনিক সম্মেলন।
দুই দিনের কর্মশালা ও নীতি সম্মেলন শেষে এই ঘোষণা দেন এপনিক চেয়ারম্যান গৌরব রাজ উপাধ্যায়। এসময় এপিনিক কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির, ইওসিনোবু মাতসুজাকি, ফেং লেং, পল উইলসন এবং ক্যাম জি ইয়াং উপস্থিত ছিলেন।
গত ৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলন পরিচালনা করেন এপনিক মহাসচিব ভিনসেন্ট অ্যাচেই আতিয়েঞ্জা। সঙ্গে ছিলেন কোষাধক্ষ্য কেনি হাং।
আর বাংলাদেশ থেকে সম্মেলনে যোগ দেন এশিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে ইন্টারনেট নম্বরের বিস্তৃতি ও নিবন্ধন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট শতাধিক ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ও অংশীজন। চার দিনের এই সম্মেলনি ছিলো তিন ভাগে বিভক্ত। একই সঙ্গে হয়েছে এশিয়া প্রশান্ত মহাসারীয় অংঞ্চলের ইন্টারনেট গভর্নেন্স নিয়ে বৈঠক (এপিআইজিএফ), স্কুল অব গভর্নেন্স (এপিসিগ) এবং নেটওয়ার্ক সুরক্ষার প্রকৌশল বিষয়ক কর্মশালা (নগ)- এপি নিগ।
সম্মেলন কেন্দ্রের ৪টি হলে অংশগ্রহণকারীদের আইপিভি৬, নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি, ডিএনএস সিকিউরিটি এবং এপনিক পলিসিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরা এ অঞ্চলের ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেন। আলোচনায় আইপিভি ৬ স্থাপনের পাশাপাশি এখনো যে আইপিভি ৪ নোডগুলো অব্যবহৃত রয়েছে তা লিজ অব্যহত রাখার পক্ষে ভোট দেন সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটার। তবে এতে নিরপেক্ষ অবস্থানে ভোট দান থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ।
সম্মেলনে উপস্থিত মোট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এক পঞ্চমাংশই ছিলো বাংলাদেশের। সম্মেলন থেকে প্রাপ্তি বিষয়ে এপনিক কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য সুমন আহমেদ সাবির ডিজিবাংলাকে জানান, এবার এপিনিগ এ বেশকিছু নতুন টুলে সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে অংশগ্রহণ কারীদের। এরমধ্যে রাউটার হাইজ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা পেতে আগাম সতর্ক বার্তা পাওয়ার টুলসের মতো দারুণ কিছু আপডেট টুলের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। এগুলো নেটওয়ার্কের সুরক্ষায় ইন্টারনেট সেবাদাতা থেকে শুরু করে সেবগ্রহিতাদের স্বস্তি দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তৃতীয় দফায় বাংলাদেশ এই সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় সস্তির পাশাপাশি পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পুরোপুরি শঙ্কা মুক্ত নন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম বার আমরা হলি আর্টিজেনের জন্য করতে পারিনি। দ্বিতীয় বারে কোভিড হানা। এবার তৃতীয় বার এই সুযোগটা বড় প্রাপ্তি। এখন বাস্তবায়নের সুসময়ের অপেক্ষা করছি।
সম্মেলনে যোগদানকারী বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলের ৯৫ শতাংশই ছিলেন আইএসপিএবি’র সাধারণ সদস্য। এদের মধ্যে সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি ইমদাদুল হক, মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া, যুগ্মসম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম রাশেদ, কোষাধক্ষ মোঃ আসাদুজ্জামান সুজন এবং পরিচালক সাকিফ আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান রাজু।
এর আগে ২০২০ সালে এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের (এপনিক) ৫০তম সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ ছিলো বাংলাদেশ। করোনার কারণে ওই বছর ৮-১০ সেপ্টেম্বর এই সম্মেলনটি হয়েছিলো ভার্চুয়ালি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে আঞ্চলিক ইন্টারনেট নিবন্ধন (আরআইআর) এ যুক্ত ৫ টি সংগঠনের একটি হচ্ছে এপনিক। এটি একটি অলাভজনক সদস্যপদ-ভিত্তিক সংগঠন, যার সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী, টেলিযোগাযোগ সরবরাহকারী, ডেটা সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, জাতীয় ইন্টারনেট রেজিস্ট্রিস এবং এ জাতীয় সংস্থা যার নিজস্ব নেটওয়ার্ক রয়েছে। প্রতি ৬ মাস পর পর সম্মেলন করেন এই নেটওয়ার্ক প্রকৌশলীরা। এর একটি এপনিক এবং অপরটি এপ্রিকট নামে পরিচিত।