গত এক বছরে ২জি, থ্রি-জি, ফোর-জি এবং ফাইভ-জি মিলিয়ে মোট দুই কোটি ৬১ লক্ষ মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও বাজারজাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোাগযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। দেশে বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্রান্ডসহ ১৪টি কারখানায় এসব ফোন উৎপাদন করেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। ফেলে দেশিয় কারখানায় উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেট দিয়েই দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৬৩ ভাগ পূরণ করার পাশাপাশি প্রায় ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) ঢাকায় বিটিআরসি মিলনায়তনে স্থানীয়ভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে মত বিনিময় কালে এ তথ্য জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় ২০১৮ সালের পর থেকে গত চার বছরে এই সফলতা এসেছে। আমরা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট উৎপাদক হয়েছি এবার রপ্তানীকারক হতে হবে। সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তি বান্ধব নীতির ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্পে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দেশের ১৪টি মোবাইল কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল যন্ত্র আমদানিকারী দেশ থেকে বাংলাদেশকে উৎপাদন ও রপ্তানিকারী দেশে রূপান্তরের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনাসহ যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়নের ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ ডিজিটাল ডিভাইস আমদানিকারী দেশ থেকে উৎপাদক ও রপ্তানিকারী দেশে রূপান্তর লাভ করেছে বাংলাদেশ। গুণগত মানের সাথে কোন প্রকার আপস না করে বিশ্বের সেরা মানের মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে বিটিআরসির ভূমিকার প্রশংসা করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিটিআরসি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মোবাইল তৈরির জন্য গুণগতমান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দিবে না। আমাদের সন্তানদের হাতেই বিশ্বের সেরা সেট আজ উৎপাদিত হচ্ছে। আমরা আমেরিকাতেও ফাইভ-জি সেট রপ্তানি করছি। এটা আমাদের গর্বের বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী আগামী দিন গুলোতে গুণগত মান অটুট রাখার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং কারখানা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি মেনে চলার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, আমরা যদি পণ্যের গুণগতমান অটুট রাখতে পারি সেক্ষেত্রে বিদেশি হ্যান্ডসেট কেউ কিনতে যাবে না। দাম ও গুণগতমান ঠিক থাকলে চোরাই পথে মোবাইল আমদানির অবৈধ ব্যবসাও বন্ধ হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী দেশের উৎপাদিত ফোন সেট বাজারজাত করতে যথাযথ কৌশল গ্রহণ এবং গ্রাহকদেরকে ইএমআই পদ্ধতিতে সেট দেওয়ার বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে বলে পরামর্শ ব্যক্ত করে বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। তিনি ফোর জি মোবাইল হ্যান্ড সেট অধিক মাত্রায় উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কোভিডকালে দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ এলাকা ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রবর্তক জনাব মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। মন্ত্রী মহোদয় মোবাইল উৎপাদকদেরকে ট্যাব ও ল্যাপটপসহ অন্যান্য ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও রপ্তানি দেশের জন্য একটি অভাবনীয় অর্জন বলে উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় মোবাইল সেটের খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মোবাইল শিল্প বিকাশে কারখানা মালিকদের প্রতিনিধিসহ বিটিআরসি‘র নেতৃত্বে একটি কারিগরি কমিটি গঠণের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বিটিআরসি মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনসহ এই শিল্পের বিকাশে আন্তরিকতার সাথে কাজে করতে বদ্ধপরিকর।
মোবাইল কারখানার প্রতিনিধিরা এনওসি ও গ্রে মার্কেটসহ কতিপয় বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এসময় মন্ত্রী তাদের বিষয়টি অতি দ্রুততার সাথে বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।