নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল ডিভাইস ও কনটেন্ট দিয়ে তাদেরকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিলে, তারা শিক্ষায় বৈশ্বিক মানদণ্ড অতিক্রম করতে পারবে। আর তাই শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্টসহ ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সংযুক্তি এবং ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, শিক্ষার অবকাঠামোগত পরিবর্তন শিক্ষা পদ্ধতিতেও করার বিকল্প নেই। স্মার্ট মানুষ তৈরির জন্য প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে ডিজিটাল কনটেন্টসহ ডিজিটাল ডিভাইস প্রয়োজন। কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণের দিন শেষ। মিশ্র শিক্ষা পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার রূপান্তরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সেভ দ্য চিলড্রেন ও ফ্রেন্ডশীপ এর যৌথ আয়োজনে গণসাক্ষরতা অভিযান, শিখন অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা শীর্ষক অনুষ্ঠানে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
গণসাক্ষরতা অভিযান কাউন্সিলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এ্যারোমা দত্তের সভাপতিত্বে এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযান এর নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ ফরহাদুল ইসলাম, সেভ দ্য চিলড্রেন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভান ম্যানেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যামিরেটাস ও এডুকেশন ওয়াচ এর মূখ্য গবেষক ড.মনজুর আহমেদ, ফ্রেন্ডশিপ এর সিনিয়র ডিরেক্টর ও শিক্ষা কর্মসূচির প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) ইলিয়াস ইফতেখার রসুল, জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম, ঢাকা মোহাম্মদপুর থানা শিক্ষা অফিসার মমতাজ বেগমসহ কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
কর্মসূচির পরিচিতি, অর্জন ও সম্ভাবনা বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন এর এম্পাওয়ারিং গার্লস থ্রু এডুকেশন (ইজিই) কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক শাহিন ইসলাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক ড. হ্যাপী কুমার দাশ।
১৯৯৯ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাজীপুরে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং দেশব্যাপী আরও ৩২ টি মাল্টিমিডিয়া বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, কাগজের যুগের পর শিক্ষায় ডিজিটাল যুগে যাওয়ার সময় হয়েছে। কাগজের বইয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল কনটেন্ট এবং ডিজিটাল ডিভাইস চালু করতে পারলে জাতি অনেক বেশি সুফল পাবে।
তিনি আরো বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে বিটিআরসি‘র সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থায়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধিন ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পার্বত্য চট্রগ্রামের ২৮টি পাড়া কেন্দ্রে ডিজিটাল যন্ত্রে ডিজিটাল কনটেন্টে পাঠদান কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শনকালে ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রী দেশের দূর্গম ও সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাড়া কেন্দ্রে প্রকল্পের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেকে টিসি নিয়ে এই সকল স্কুলে চলে আসছে। যেসব স্কুলে কম্পিউটার আছে সেসব প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল কনটেন্ট দেওয়ার দাবি উঠেছে। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট হচ্ছে ডিজিটাল যন্ত্রে পাঠদানের জন্য প্রচলিত পাঠ্য সূচির মানসম্মত ইন্টারএকটিভিটি, ছবি, অডিও, ভিডিও, এ্যানিমেসন, টেক্সট ও অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট দিয়ে প্রোগ্রামিং করা সফটওয়্যার দিয়ে ডিজিটাল ডিভাইসে শিক্ষার প্রবর্তন করা ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে প্রকল্প মূল্যায়নে দেখানো হয়, মেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফলভাবে সমাপ্তিতে সহায়তা করা এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহযোগিতা করার লক্ষ্য নিয়ে কর্মসূচিটি শুরু হয়। এই কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম এবং জামালপুরের ১২০ টি বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ১২৫৩৬ জন মেয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি সময়ের আগে ও পরে ভার্চুয়াল শিখন প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে ডিজিটাল-কন্টেন্ট ব্যবহার করে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত শিক্ষায় সহায়তা প্রদান করা হয়। ফলস্বরুপ, কর্মসূচির উপর জরিপের মাধ্যমে অন্যান্য এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে ইজিই কর্মসূচির আওতাধীন শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সংখ্যা, প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিকে ভর্তির হওয়ার সংখ্যা এবং এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে সফলভাবে কৃতকার্য হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় শতভাগে পৌঁছে গেছে। সেইসাথে আশ্চর্যজনকভাবে ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিবাহের সংখ্যা (০) শূন্য তে নেমে এসেছে।