ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রকেট প্রযুক্তির ওপর গবেষণাগার স্থাপন করা হবে। এজন কোটি টাকার বেশি খরচ করে একটি অত্যাধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তার প্রত্যাশা আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকেও চাঁদে বা মঙ্গলগ্রহে মাহাকাশ যান উৎক্ষেপন করা হবে। মহাকাশেও বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করবে।
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের ছাত্র নাহিয়ান আল রহমান অলির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘোষণা দেন পলক। তিনি জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে তৈরি প্রথম ওয়েদার রিসার্চ রকেট (সাউন্ডিং রকেট) ধূমকেতু-৫ রকেটটি ৫২ কিলোমিটার উচ্চতায় উৎক্ষেপন করতে পারে সেজন্য আরো ২৫ লাখ টাকা বিশেষ অনুদান দেয়া হবে। একইসঙ্গে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অচিরেই লঞ্চিং প্যাড স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার এবার স্পেস রিসার্চ এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও জানান পলক। তিনি বলেন, চর বা দ্বীপাঞ্চলে ২-১০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে তৈরি ওই লঞ্চিং প্যাডে ছোট-মাঝারি রেঞ্জের রকেট উৎক্ষেপন করা যাবে।
বুধবার ময়মনসিংহ আইটি/হাই-টেক পার্ক-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই তথ্য দেন তিনি।
প্রযুক্তি দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী যে শত কোটি টাকা ব্যয় করছেন তা যেনো বিফলে না যায় সে বিষয়ে উপস্থিত শিক্ষকদের সতর্ক করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি যেনো শুনতে না পাই কোনো একটা স্কুল বা মাদ্রাসায় ওই শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কিংবা আলমারির ভেতরে ল্যাপটপগুলো ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নাহিয়ানের বয়স যখন অল্প, তখন টেলিভিশনে রকেট উড্ডয়নের দৃশ্য দেখে তার মনে সাধ জাগে রকেট তৈরি করার। লক্ষ্য পূরণে পরবর্তীতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন নাহিয়ান। চিন্তা করলেন, ব্যতিক্রম কিছু তৈরি করে মানুষকে তাক লাগিয়ে দেবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ক্যাম্পাসের এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে শুরু করলেন রকেট তৈরির কাজ। কিন্তু পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা, অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রীর অভাবে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হলো সেই প্রচেষ্টা। এর দুই বছর পর, নাহিয়ান আবারও নামেন তার অধরা স্বপ্নের খোঁজে। এবার পুরোপুরি সফল না হলেও ব্যর্থ বলা যাবে না তাকে। প্রায় ৫৩ মিনিটের মতো রকেট ওড়াতে সক্ষম হন সেবার। এরপর কেটে গেছে আরো তিনটি বছর। ততদিনে স্নাতক শেষ হয়েছে তার। ২০১৭ সালের শেষের দিকে আবারো শুরু করলেন। তবে এবারের নাহিয়ান যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও দক্ষ। যার ফলও তিনি পেলেন। চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর, ২০২২ সালে এসে অবশেষে তৈরি হলো রকেট।
শুরু থেকেই অর্থ জোগাড় করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে নাহিয়ান ও তার দলকে। শেষপর্যন্ত একটি ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়ে ২ লাখ টাকা লোন নেন তারা। তাছাড়া এর পেছনে টিউশনির টাকাও ব্যয় করেছেন নাহিয়ান। ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত নাহিয়ান একাই এ নিয়ে কাজ করতেন। পরবর্তীতে একটি দল তৈরির প্রয়োজন অনুভব করেন। ২০১৮-তে বেশ কিছু তরুণ যুক্ত হন তার সঙ্গে। গড়ে ওঠে ১৫ সদস্যের দল ধুমকেতু এক্স। এদের মধ্য থেকে ৫-৭ জন এই প্রকল্পে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সাইদুর, নাদিম, লিয়ান, আবরার, রিজু, বিন্দু, নাইম ও আশরাফ। নাহিয়ান এখন অপেক্ষা করছেন কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেতের।