লন্ডনের পর তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের জন্য দেশে বসেই লেদারল্যান্ডের বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়ার নতুন দ্বার উন্মোচন হলো আজ। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের বন্ধুত্বের সুবর্ণ জয়ন্তীর স্বারক হিসেবে শনিবার ‘বাংলাদেশ আইটি কানেক্ট পোর্টাল-নেদারল্যান্ডস’ নামে এই ভার্চুয়াল ডেস্কের উদ্বোধন করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিশেষায়িত এই ভার্চুয়াল ডেস্কের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে এআই বটও।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং নেদারল্যান্ডস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে চালু করা এ ভার্চুয়াল ডেক্স মূলত দুই দেশের আইটি কোম্পানীর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি ও বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নেদারল্যান্ডের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে বলে আশাব ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘নেদারল্যান্ড-বাংলাদেশ: ফোর্জিং অ্যা ডিজিটাল ইকোনমি পার্টনারশিপ’ শিরোনামের ওয়েবিনারে উন্মোচন করা হয় ভার্চুয়াল ডেস্কটি। নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে রয়্যাল ডাচ শেল প্রোগ্রাম ম্যানেজার কবির সিরাজ, আমস্টারডামভিত্তিক প্লানেট নাইন এর প্রতিষ্ঠাতা মার্টিন রোয়েলফস, উবার আমস্টারডাম এর হেড অব ইনোভেশন প্রোডাক্টস পোর্টফোলিও জুলকার বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির প্রস্তুতি ও নানা উদ্যোগে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আইটি-আইটিইএস বিশেষজ্ঞ সামি আহমেদ। উপস্থাপনায় তিনি দেখিয়েছেন, দেশের ৭০টিরও বেশি আইসিটি রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ আইটি কানেক্ট পোর্টাল-নেদারল্যান্ডস’ ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে তাদের প্রোফাইল আপলোড করেছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে আইসিটির বিশেষায়িত খাতে বাংলাদেশেী আইটি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের তালিকা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নেদারল্যান্ডের ইআইপিও কো-ফাউন্ডার জুস্টহেলমস, ব্রেইনপোর্ট স্মার্ট ডিসট্রিক্ট সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিটার পোরথেইনি, ডাচ বিদেশ মন্ত্রণালয়ের ইয়্যুথ এড্যুকেশন ওয়ার্ক এর সিনিয়র পলিসি অফিসার থিয়েডর কল্যুভাসসহ দেশটির বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রখাতের বিশিষ্টজনেরা সংযুক্ত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিতে আগামী প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তির অভিনব কৌশল গ্রহণে সক্ষমতা অর্জন ও নেতৃত্বদানের জন্য ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (SHIFT) স্থাপন, ডিজিটাল লিডারশীপ একাডেমি এবং সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভেলিউশন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, অন্যদিকে আছে অমিত সম্ভাবনা। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকার দক্ষ মানবসম্পদ এবং উদ্ভাবনের ওপর জোর দিয়েছে। দেশে ৩শ’ স্কুল অব ফিউচার ও ৩৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। উদ্ভাবন ও স্টার্টআপে সহযোগিতাদানে আইডিয়া প্রকল্প, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লি. বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট (বিগ) থেকে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
পলক আরো বলেন, নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের প্রসার ঘটছে। এবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ব্যবসা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে চালু করা হলো ‘বাংলাদেশ আইটি কানেক্ট পোর্টাল-নেদারল্যান্ডস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম, যা একদিকে যেমন প্রযুক্তি, বিপিও এবং দু’দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে সহযোগিতার করবে, অন্যদিকে দেশের আইটি খাতে নেদারল্যান্ডের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
দেশের আইসিটি খাতকে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য উল্লেখ করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার দেশে ৩৯টি হাইটেক/আইটি পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করছে। ইতোমধ্যে নির্মিত ১০টি পার্কে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে।
তিনি বলেন, তের বছরে ডিজিটালাইজেশনের ফলে বাংলাদেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ এলাকা মোবাইল ফোন কভারেজের আওতায় এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারি প্রায় সাড়ে ১২ কোটি। উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার ফলে আউটসোর্সিং, ই-কমার্স, এফ-কমার্সের এবং ইগভর্নমেন্ট কাযর্ক্রম বিস্তৃত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী পলক দু’দেশের মধ্যে উদ্ভাবন এবং আইসিটি খাতে ব্যবসায়িক সহযোগিতা শক্তিশালী করার মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা নেদারল্যান্ডের সহযোগিতা কামনা করেন।