সরকারের সেবাসমূহকে ই-সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেওয়া এবং সবক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো স্থাপনে ‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ) সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করার লক্ষে ৫,৮৮৩.৭৪ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪ জেলা, সব উপজেলা, সব ইউনিয়নের সর্বত্র এমনকি গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সরকারি সেবা জনগণের কাছে সহজে এবং দ্রুত পৌঁছাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন’ (Establishing Digital Connectivity Project) প্রকল্পটিন অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে এখন চলতি বছরের জুলাই থেকে জুন ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর।
প্রকল্পটি পাশ হওয়া বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়ন ও মানবসম্পদ বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আধুনিক আইসিটি ল্যাবে সজ্জিতকরণ, স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জনগণের কাছে সেবা সরবরাহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বরান্বিত করা, আইসিটিভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রসার এবং তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি বিনির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
প্রকল্প অনুমোদন বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, “ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন” প্রকল্পটি অনুমোদন করে দেওয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের প্রতি।
প্রকল্পের অধীনে দেশজুড়ে এক লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্যান্ড অ্যান্ড ইউজার কানেকটিভিটি, ১০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব, সেন্ট্রাল ক্লাউড প্লাটফর্ম এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সিলেন্স ল্যাব স্থাপন করা হবে।
এছাড়াও জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে আইটি অবকাঠামোসহ এলএএন এনওসি (নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার), প্রশিক্ষণ সুবিধাদি, ৫৫৫টি ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড ইমপ্লোজমেন্ট ট্রেনিং সেন্টার (ডিএসইটি), মাঠ পর্যায়ের ক্লাউড ফাইল সার্ভিস এবং ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য কেন্দ্রীয় সার্ভার অবকাঠামো স্থাপন; আইসিটি ল্যাব, স্মার্ট ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং ডিসট্যান্স লার্নিং প্ল্যাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো সুবিধা সম্বলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন; সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাস্টিকস বাস্তবায়নের নিমিত্ত সিআরভিএস সেন্টার আইএসডিপি সার্ভার স্থাপন, মাঠ পর্যায়ে পাঁচ হাজার ৫০০টি এনরোলমেন্ট অবকাঠামো স্থাপন এবং ১৭ হাজার ৩১৪টি সার্ভিস ডেলিভেরজ ডিভাইস বিতরণ; ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশন স্থাপন; ৪৯২টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, একটি ২১ তলা বিশিষ্ট ডিওআইসিটি টাওয়ার নির্মাণ, উপজেলা শেয়ারড আইসিটি অপারেশন সেন্টারের জন্য ৪৯১টি উপজেলা বিল্ডিংয়ের একতলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ; ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশনের আওতায় ফিল্ড সার্ভে, ২০ হাজার কৃষককে স্মার্ট সেন্সর ডিভাইস প্রদান; ছয়টি মোটরযান ক্রয় (দুটি জিপ, দুটি মাইক্রোবাস, দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ); ২৮ ক্যাটাগরির পরামর্শক সেবা ক্রয় ও কম্পিউটার এক্সেসরিজ ও সফটওয়্যার সংগ্রহ করা হবে।
একইসঙ্গে ১০২টি অফিস ইক্যুপমেন্ট ও ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২টি ফার্নিচার সংগ্রহ; বৈদেশিক প্রশিক্ষণ (বৈদেশিক ভেন্যু : ৪০ জন, বাংলাদেশ ভেন্যু : তিন হাজার ৩৩৫ জন), স্থানীয় প্রশিক্ষণ : ১৬ হাজার ৮২১ জন; সেমিনার ও কনফারেন্স আয়োজন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৯ জন জনবল নিয়োগ করা হবে।
প্রকল্প বাস্তাবায়নে সরকারি তহবিল থেকে আসবে দুই হাজার ৫০৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা আর চীন সরকার ঋণ হিসেবে দেবে ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।