বাংলা লিপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাষাবিজ্ঞানীদের মতামতকে গৌণ হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে ‘দেবনাগরী’ বিষয়ক ত্রুটিতে থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশের ভাষাবিজ্ঞানীদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকে পরামর্শ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বুধবার (১০ জুলাই) ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে বাংলা ইউনিকোড লিপি উন্নয়নে, বাংলা একাডেমির ও নিউ ব্রাহ্মী জেনারেশন প্যানেল সদস্যদের সাথে বাংলাদেশের গবেষকদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এই দাবি জানান বিজয় বাংলা’র এই রূপকার।
জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর শামসুজ্জামান খান,অইসিএএনএন এর হেড অব ইন্ডিয়া শমিরন গুপ্ত প্রমুখ উপস্থিথ ছিলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশের বাঙালি বুকের রক্ত দিয়েছে। বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশেও আমাদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। মুনীর অপটিমার মাধ্যমে শহিদ মুনীর চৌধুরী বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়। বর্তমানে বাংলা লিপির উন্নয়নে কাজ করতে গেলে এই পটভূমিকে আমাদের স্মরণে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বাংলা লিপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতামতকে অনেক ক্ষেত্রেই গৌণভাবে দেখেছে ফলে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অক্ষর ব্যবহারে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হই। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষাকে দেবনাগরীর মতো করে দেখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলা যে স্বতন্ত্র ভাষা এবং তার লিপির ব্যবহারও যে স্বতন্ত্র সেটি মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের ভাষাবিজ্ঞানীসহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও মতামতকে বাংলা ইউনিকোড লিপি উন্নয়নে বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত ব্যবহারকে যুগোপযোগী এবং সহজসাধ্য করতে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাভাষা ও ইন্টারনেটকে সম্পৃক্ত করে এ ধরণের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। বাংলাভাষা চর্চা ও গবেষণা বাংলাভাষার উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নেয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে এর প্রয়োগ করা আলাদা কোন এজেন্ডা নয়, এটির সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক।
বাংলাভাষাকে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে তার দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাভাষায় যখন ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম হয়, তখন বাংলাদেশ থেকে কোন মতামত না নেয়ায় বাংলা ইউনিকোডে ত্রুটি রয়ে গেছে। বাংলাভাষায় অস্তিত্ব নেই এমন অনেক অক্ষর ইউনিকোডে অন্তর্ভূক্ত রয়ে গেছে।
তিনি বলেন,১৯৮৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত কনসোর্টিয়ামের মিটিংয়ে তিনি বাংলাভাষার বিদ্যমান অক্ষরসমূহ অন্তর্ভূক্ত করে ত্রুটি দূর করার দাবী জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অদ্যাবধি দেবনাগরীর অনুরূপ সুপারিশকেই প্রধান্য দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১শত ৬০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাভাষার গবেষনা ও উন্নয়নের ফলাফল সারা বিশ্বের বাঙালিরা ব্যবহার করতে পারবে।