পাইলট প্রকল্প হিসেবে কোরবানির ঈদে ডিএনসিসি স্মার্ট হাটে প্রথমবারই বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিকসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের চ্যানেলে ৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তর সিটি মেয়র। পাশাপাশি রিক্সাকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় আনার কথা জানিয়ে মেয়র বলেছেন, আগের অনিবন্ধিত সব রিকশা তুলে দিয়ে নতুন করে কিউআর কোডযুক্ত ২ লাখ রিকশা নিবন্ধন দেওয়া হবে।
বুধবার (৩ আগস্ট) গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবনে ‘স্মার্ট হাট, স্মার্ট বাংলাদেশ’র প্রতিবেদন ঘোষণা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে ২৮ হাজার রিকশার লাইসেন্স দেওয়া ছিল। অথচ এখন দশ লাখেরও বেশি রিকশা চলছে। শহরজুড়ে চলা এসব রিকশার কারণে রাস্তায় কোনও শৃঙ্খলা নেই। এদের কোনও ডাটাবেজ নেই। তাই ডিএনসিসির তরফ থেকে রিক্সাকে কিউআর কোডের অধীনে আনা হবে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, রাজধানীতে এত রিকশা কীভাবে এলো, এর কোনও হিসাব নেই। ডাটাবেজ, শৃঙ্খলা, জবাবদিহিতা নেই। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে ২ লাখ রিকশা কিউআর কোডের মাধ্যমে চালু করার পরিকল্পনা করেছি। আগেকার যেসব রিকশা বর্তমানে রাস্তায় চলছে, সেগুলো ক্লোজ করা হবে। তারপর শুধুমাত্র কিউআর কোডযুক্ত রিকশা চলবে রাস্তায়। এর ফলে একটা সিস্টেম তৈরি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রয়োজনে যে কোনও সময় কিউআর স্ক্যান করলেই বোঝা যাবে- সেই রিকশা কোথাকার, মালিক কে, গ্যারেজ কোথায়। অর্থাৎ একটি রিকশার যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে এই কিউআর কোডের মাধ্যমে।
ডিজিটাল মাধ্যমে ভবিষ্যতে কীভাবে ডিজিটাল হাটের পরিধি আরও বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এর মাধ্যমে শুধু সহজেই লেনদেন হবে না, মানুষ বিপুল টাকা নিরাপদে লেনদেন করতে পারবে। গাবতলীর পশুর হাটকেও ডিজিটাল লেনদেনের আওতায় আনা হবে। মানুষ এর সুফল পাবে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, গাবতলী আমদের একটি স্থায়ী পশুরহাট। এখানে সারা বছরই পশু বেচা-কেনা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। তাই এটিকে আমরা স্মার্ট করতে চাই এবং এটি করতে আমরা খুব বেশি সময় নেব না। একজন খামারি যখন তাদের পশু নিয়ে শহরে আসেন প্রকৃতপক্ষে তাদের অনেক কষ্ট হয়। পশুগুলো বিক্রি করে বিক্রিত টাকা নিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরার চিন্তাটাও তার মধ্যে থাকে। যাওয়ার সময় টাকা নিয়ে একজন খামারি যেন নির্বিঘ্নে নিরাপদে যেতে পারেন সেজন্য আমরা এই ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা করছি। এর ফলে খামারিদের আর নগদ টাকা বহন করতে হচ্ছে না।
স্মার্ট সিটি নিয়ে ডিএনসিসি কাজ করছে জানিয়ে মেয়র বলেন, আপনারা যদি কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা, ফুটপাতে ময়লা, জলাবদ্ধতাসহ অন্য সমস্যা দেখেন তাহলে ছবি তুলে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে আপলোড করুন। কথা দিচ্ছি আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেটা সমাধান করার ব্যবস্থা নেব। এছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে স্মার্ট এলইডি লাইট ব্যাপকভাবে আমাদের কাজে লাগছে। লাইটগুলো ডিমিং করে রাত ৮টা-১২টা পর্যন্ত ৫০ শতাংশ এবং রাত ১২টা-৪টা পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য আমরা বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক খুরশীদ আলম, শাহ জিয়াউল হক, ডিএনসিসির কাউন্সিলর মফিজুর রহমান, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, স্মার্ট হাটে অংশ নেওয়া ছয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিকাশ, ভিসাকার্ড সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ছয়টি ডিজিটাল পশুর হাটের ইজারাদার, ডিএনসিসির কাউন্সিলর এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।