গত ১৭-৩০ বছর ধরে আসিয়ান দেশগুলোতে ই-কমার্স ব্যবসায়কে ভ্যাটমুক্ত রাখা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশেও এখনো এই খাতটি ভ্যাটের আওতামুক্ত। কিন্তু প্রতি বছরই বাজেট এলে এই খাতে ভ্যাট আরোপের তোরজোর চলে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে অন্তত আগামী ৫ বছর যেন ই-কমার্সের ওপর কোনো ভ্যাট আরোপ করা না হয় এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ই-ক্যাব উত্থাপিত দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এই খাতের ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘আর সারপ্রাইজ দেবেন না’।
ই-ক্যাবের আয়োজনে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি রেস্তোরায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তারা।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে ব্যবসায়ের ডিজিটাল রূপান্তরের কোনো বিকল্প নেই। সময় ও দূরত্বের বাধা দূর করে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করতে ই-কমার্স এখন সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। সবে মাত্র বিকশিত হতে শুরু করায় এটি সরকারের একটি লাভজনক সেক্টর হিসেবেও বিবেচিত। এমন সময় ফেসবুক ও গুগল-এর মতো প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে গিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ডিজিটাল ব্যবসায়ের ওপরেও সাড়ে সাত (৭.৫%) শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কেবল ব্যবসায়ের ডিজিটাল রূপান্তরই বাধাগ্রস্ত হবে না, উদ্যোক্তাদের ওপর দ্বৈত বোঝাও চাপিয়ে দেয়া হবে। একইসঙ্গে ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়নও হুমকীর মুখে পড়বে।
প্রতিবেশীদেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ই-কমার্স খাত প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো অনেক দেশেই ই-কমার্সে ভ্যাট নেই। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মাধ্যমে গত বছর কয়েক হলো কেনা-কাটায় ভোক্তারা ডিজিটাল সুবিধায় অভ্যস্ত হতে শুরু করেছিলো। সরকারের উৎসাহ উদ্দীপনায় চলতি বছরে দেশজুড়ে ৮টি বিভাগে ই-কমার্স ডাক মেলার মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল ব্যবসা শহরের বাইরেও প্রান্তিক মানুষের দোরগোরায় নিয়ে যেতে দিনান্ত কাজ করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু প্রস্তাবিত ভ্যাট আরোপে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিদ্যমান যে দূরত্ব ঘুচতে শুরু করেছিলো তাও বাধাগ্রস্ত হবে। থমকে যাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ। বেকারত্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা আঁতুর ঘরেই মৃত্যু বরণ করবে। ই-কমার্স খাতে ভ্যাট সরকারের ডিজিটাল সেবা খাত বিকাশে বাধাগ্রস্ত করবে উল্লেখ করে ই-ক্যাব সেক্রেটারি মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বেলেন, “আমরা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে দীর্ঘ মেয়াদে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি।”
ই-ক্যাব সেক্রেটারি বলেন, আমরা সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগের সঙ্গে এক মত। কিন্তু তাই বলে বৃহত্তর স্বার্থে স্বল্প মেয়াদী আয়ের বিনিময়ে নয়।
এ কারণেই আমরা ই-কমার্সের সঙ্গাকে পরিস্কার করতে চাই। যাদের ফিজিক্যাল কোনো স্টোর নেই, কেবল অনলাইনেই পণ্য বিক্রি করেন শুধু সেসব প্রতিষ্ঠানকেই ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানাই। কেননা অনলাইন ব্যবসায় করেন তারা বাজার থেকে পণ্য কেনার সময়ই একদফা ভ্যাট দিয়ে থাকেন। এরপরও যদি পুনরায় তাদেরকে ভ্যাট দিতে হয় তবে তাদেরকে দুই দফা কর দিতে হবে। আর এই করভার কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর গড়াবে। অর্থাৎ অনলাইনে পণ্য মূল্য বেড়ে যাবে। তখন কেউ অনলাইনে কেনা-কাটা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
তিনি জানান, ই-ক্যাব আগামী তিন বছরে সারাদেশে আরও ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ই-কমার্সের সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার উদ্যোক্তা সরাসরিভাবে জড়িত। ই-কমার্সের উপর প্রস্তাবিত ভ্যাট তাদের সবার জন্যই একটা মারাত্মক ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। শুধু উদ্যোক্তাদের এই খাতে আসলেই চলবে না, গ্রাহকদেরও নিয়ে আসতে হবে। নতুন করে এই খাতের উপর প্রস্তাবিত ভ্যাট উদ্যোক্তা-গ্রাহক উভয়কেই এ খাত থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরাও নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যেতে চাই। আমরা চাই এই পুরো প্রক্রিয়ার উন্নয়ন। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোও এক্ষেত্রে আমাদের থেকে অনেকটা এগিয়ে। এই খাতে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে নীতি-নির্ধারকদের ডিজিটাল নীতিমালা নিয়ে কাজ করতে হবে।”