মঙ্গল মানেই যেন রুক্ষ্ম একটা ছবি ভেসে ওঠে আমাদের চোখের সামনে। সৌরজগতের লাল গ্রহে মরিচা পড়া লোহার কাঠামোর জন্য বিখ্যাত। আমেরিকান স্পেস এজেন্সি জানাচ্ছে. মঙ্গলের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যা হিমাঙ্কের তাপমাত্রার চেয়েও অনেক কম। গ্রহটির বায়ুমণ্ডল খুব পাতলা এবং খুব ঠান্ডা হওয়ার কারণে বরফ ছাড়া আর কোনও আকারে পানির অস্তিত্ব নেই। তবে একটি নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, সাড়ে চার বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহে ৩০০ মিটার (প্রায় এক হাজার ফুট) পর্যন্ত গভীর সমুদ্র ছিলো। গত ১৭ নভেম্বর কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মঙ্গলে সমুদ্রের উপস্থিতি সংক্রান্ত এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিলো।
সেন্টার ফর স্টার অ্যান্ড প্ল্যানেট ফরমেশনের প্রফেসর মার্টিন বিজ়ারো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “সেই সময় মঙ্গল গ্রহে বরফে ভরপুর গ্রহাণু দিয়ে বোমাবর্ষণ করা হয়। এই কাণ্ড গ্রহের বিবর্তনের প্রথম ১০০ মিলিয়ন বছরে ঘটেছিলো। আর একটি আকর্ষণীয় দিক হলো যে, গ্রহাণুগুলো জৈব অণুগুলোও বহন করে যা জীবনের জন্য জৈবিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”। তবে বরফের গ্রহাণুগুলো যে কেবল লাল গ্রহে পানি পরিবহন করেছিলো এমনটা নয়, সেই সঙ্গেই আবার অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো বায়োলজিক্যাল উপাদানগুলোও বহন করেছিলো।
সর্বশেষ এই গবেষণা অনুসারে, গ্রহের প্রাচীন মহাসাগরগুলো কমপক্ষে ৩০০ মিটার গভীর ছিলো। মার্টিন বিজ়ারো বলছিলেন, ওই মহাসাগরগুলো হয়তো এক কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরতায় পৌঁছেছিল। সঙ্গে তিনি এ-ও যোগ করেছেন যে, সেই সময় হয়তো পৃথিবীতেও এত পানি ছিলো না।
তিনি যোগ করেন, “এই ঘটনা মঙ্গলের প্রথম ১০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে ঘটেছিলো। তার পরে পৃথিবীতে সম্ভাব্য জীবনের জন্য বিপর্যয়কর কিছু ঘটেছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, পৃথিবী এবং অন্য একটি মঙ্গল-আকৃতির গ্রহের মধ্যে একটি বিশাল সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই শক্তিশালী সংঘর্ষের ফলেই আর্থ-মুন সিস্টেম গঠিত হয়েছিল এবং একই সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত সম্ভাব্য জীবনকে নিশ্চিহ্ন করেছিলো”।
এখন এই নতুন গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীদের কাছে সত্যিই আরও দৃঢ় প্রমাণ চলে এলো যে, মঙ্গল গ্রহে পৃথিবীরও অনেক আগে প্রাণের উদ্ভবের জন্য সঠিক অবস্থা ছিলো।
ডিবিটেক/বিএমটি