অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তরুণ তরুণীদের মাথার খুলির গঠন বদলে যাচ্ছে। সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশিত হওয়া এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, স্মার্টফোন অথবা ওই জাতীয় বৈদ্যুতিন গ্যাজেট ব্যবহারের সময় বিশেষ শারীরিক অভিব্যক্তি থাকে, তার ফলেই মাথার খুলিতে একধরণের ‘শিং’ আকৃতির হাড়ের বৃদ্ধি হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের সানশাইন কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি এবং ওয়াশিংটন পোস্ট।
সমীক্ষকদের একজন জনসন এই প্রসঙ্গে বললেন, “দীর্ঘ দিনের মোবাইল ফোন দেখার অভ্যেসের ফলে যদি শারীরিক পরিবর্তন ঘটে যায়, তা নিঃসন্দেহে চিন্তার ব্যাপার।”
গবেষকে দলের অপর সদস্য ডেভিড সাহার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন “আমি বিগত ২০ বছর ধরে চিকিৎসাসেবার কাজ করে চলেছি। এবং কেবল গত ১০ বছরেই আমি আমার কাছে আসা রোগীদের মাথায় এমন হাড়ের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা দেখতে পাচ্ছি। এবং এই সমস্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে”।
অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার ও ল্যাপটপে দিনরাত ঘাড় গুঁজে কাজ করলে অধিকাংশের ঘাড়ে ব্যথা, ঘাড় লক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। কিন্তু সেই সমস্যার চেয়ে এই সমস্যা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এক্ষেত্রে খুলির গঠনই বদলে যাচ্ছে। আর গঠনগত পরিবর্তন হলে ফের আগের অবস্থায় আসা সম্ভব না।
এ বিষয়ে ডেভিড সাহার বলেন, “সাধারণভাবে প্রতিটি মানুষের মাথা ভরের দিক থেকে মোটামুটি ভারিই বলে চলে। পরিমাণগত ভাবে যা প্রায় সাড়ে ৪ কেজি বা ১০ পাউন্ড। স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় এই পুরো ভরটিই চলে যায় ঘাড়ের উপর। এবং এর ফলেই ঘাড়ের কাছে অস্বস্তিকর একটি অবস্থান তৈরি হয়। যা থেকে মানুষের ঘাড়ের কাছে নতুনভাবে এই হাড়ের বিকাশ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ঘাড়ের এমন সমস্যাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে ‘টেক্সট নেক’ হিসেবে।”
ডেভিড সাহার এবং তার সহযোগীদের চালানো গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়েসী তরুণদের প্রায় ৪১ শতাংশের মধ্যে এই বাড়তি হাড়ের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। সাধারণভাবে এই ধরনের হাড়ের দৈর্ঘ্য দশমিক ২ ইঞ্চি বা ৫ মিলিমিটার থেকে দশমিক ৪ ইঞ্চি বা ১০ মিলিমিটারের সমান হয়ে থাকলেও এসব তরুণের ক্ষেত্রে তা ছিল ঢের বেশি। টেক্সট নেক থেকে উদ্ভুত এসব হাড়ের দৈর্ঘ্য দশমিক ৭ ইঞ্চি বা ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ডেভিড সাহার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে বড় হাড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ দশমিক ৪ ইঞ্চি বা ৩৫ দশমিক ৭ মিলিমিটার।