মঙ্গার দেশ রংপুর থেকে এসেই দেশ জয় করলেন তারা। হলেন ব্ডিঅ্যাপস ন্যাশনাল হ্যাকাথন ২০২২ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন। দলের নাম টিম হাকো। স্টুডেন্ট লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন ‘মেস মনিটর’ অ্যাপ বানিয়ে দুই হাজারের বেশি দলকে পেছনে ফেলেছেন কম্পিউটার প্রকৌশলী তিন বন্ধুর এই দল।
এদের দলনেতা মোহাম্মাদ হাদিউজ্জামান দেশে বসেই কাজ করেন বিদেশী একটি সফটওয়্যার ফার্মে। আর শাহরিয়ার কনক ও আব্দুর রাজ সাফি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোডিং সামলান। তবে এবার তারা বাগিয়ে নিয়েছেন সেরার মুকুট। সঙ্গে দুই লাখ টাকাও। এই টাকা দিয়ে এবার উদ্যোক্তা হতে চান হাদিউজ্জামানরা। অ্যাপটিকে সঙ্গী বানাতে চান মেস জীবনের।
এদিকে ঢাকার নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থী ‘ই-বিয়ে’ অ্যাপ বানিয়ে প্রতিযোগিতায় হয়েছেন দ্বিতীয়। এই দলের সদস্যরা হলেন সাদ্দাম হোসেন, ইমরান খান অভি এবং মাহমুদ হাসান ইমাম।
প্রতিযোগিতায় তিন পাহাড়িকে নিয়ে তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন সাঙ্গু দলনেতা ইয়াসিন আরফাত। বান্দরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের চার শিক্ষার্থীর এই দল তৈরি করেছে ‘চিটাগাং হিলট্র্যাক্টস ট্যুর গাইড অ্যাপ’। অ্যাপটি একজন পর্যটককে দেবে ৩৬০ ড্রিগ্রি অনলাইন সল্যুশন। এই দলের বাকি তিন সদস্যরা হলেন- উহাই মং মারমা, ডসিং মারমা এবং উমে ফ্রু মারমা।
এছাড়াও সেরা ১০টি দলকে পুরস্কার হিসেবে সর্বমোট মোট পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এই দলগুলো হলো যথাক্রমে – এ্যডু এক্সপ্লোরার, বেবি টিউব, প্রীতিলতা, ডিকোডার স্কোয়াড, পাইড পাইপার, লিঙ্গোরাইজ, ও ভার্চুয়াল ট্রেইনার।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে রবি আজিয়েটা আয়োজিত “বিডিঅ্যাপস ন্যাশনাল হ্যাকাথন ২০২২” প্রতিযোগিতার সেরা ১০ দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে রবি’র জেনারেল ম্যানেজার সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রতি বছর ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে বিডিঅ্যাপস’র। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি অ্যাপ দিয়ে এই অ্যাপ থেকে শত কোটি টাকার বেশি আয় করেছে ডেভেলপাররা। দেশের প্রতিটি থানায় বিডি অ্যাপস ডেভেলপার আছে। এর মধ্যে ২১ শতাংশ নারী।
রবি’র চিফ কমার্সিয়াল অফিসার শিহাব আহমেদ মনে করেন, অচিরেই এই প্লাটফর্ম থেকে এক লাখ ডেভেলপার প্রতিদিন ১০ হাজার করে টাকা আয় করবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, তরুণ অ্যাপস ডেভেলপাররা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। তিনি বলেন ”বিডিঅ্যাপস একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের তরুণ, তরুণীদের প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে আইসিটি বিভাগ অগমন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ব্লকচেইন, রোবটিকস, সাইবার সিকিউরিটিসহ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আইটি, আইটিইএস খাত থেকে রপ্তানি আয় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী ২০২৫ সালে আমাদের ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি আমারা। আমাদের তরুণ অ্যাপস ডেভেলপারদের সহযোগিতায় আমাদের সেই লক্ষমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
আইমান সাদিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যোর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস’র (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সিইও রাজীব শেঠি।
রাজীব শেঠি জানান, এবারের আয়োজনে কেবল নারী পুরুষই নয় তৃতীয় লিঙ্গের ডেভলাপাররাও অংশ নিয়েছেন। বাদ যাননি মাদ্রাসা পড়ুয়ারাও। এতেই বোঝা যায় প্রতিযোগিতাটি ছিলো ‘সাচ্চা ইনক্লুসিভ’।
বক্তব্য প্রদান শেষে প্রতিমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রসঙ্গত, মোট ২ হাজার দলে ভাগ হয়ে প্রতিযোগিতায় ৫ হাজার অ্যাপ ডেভেলপার অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় পর্যায়ের হ্যাকাথনের পূর্বে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে পাঁচটি আঞ্চলিক পর্যায়ের হ্যাকাথনের আয়োজন করা হয় যেখানে সারা দেশের অ্যাপস ডেভেলপাররা অংশ নেন। আঞ্চলিক হ্যাকাথন শেষে ৩৬টি দলকে মাসব্যাপী অনলাইন মেন্টরশিপ প্রদান করে ১৫টি স্বনামধন্য আইটি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে দলগুলো ৪-৫ নভেম্বর আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের হ্যাকাথনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যার মধ্যে থেকে সেরা ১০টি দল প্রতিযোগিতার বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত হয়।