ইন্টারনেট প্রশাসনে রাজধানী ঢাকার বাইরে গ্রামের তরুণদের অন্তর্ভূক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে শনিবার শেষ হলো দ্বিতীয় বাংলাদেশ ইয়্যুথ আইজিএফ। সব তরুণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আইওটি, ব্লকচেইন, ডাটা মাইনিং ও ডাটা গভর্নেন্স এর মতো এমার্জিং টেকনলোজি ব্যবহার করে গুড গভর্নেন্স, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও ইসমার্ট ইকোনমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে সত্যিকারের স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, আগামী আইজিএফ ময়মনসিংহ কিংবা ঢাকার বাইরের কোনো জেলায় করা হবে। জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে এই কার্যক্রম।
বিএনএনআরসি‘র সিইও এএইচএম বজলুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাপনী দিনের শুরুতেই ইন্টারনেটে তারুণ্যের শক্তি ও অন্তর্ভূক্তির করতে নিজেদের চলমান কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরেন ইয়্যুথ আইজিএফ সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ ভূবন।
ডেটা খরচে অষ্টম লোয়েস্ট বাংলাদেশ
প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএন আইজিএফ বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট ও বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ। বক্তব্যে ডিজিটাল বিভক্তি কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বিটিআরসি এখন ফেসিলেটর হিসেবে কাজ করছে। ইন্টারনেটকে ছড়িয়ে দিতে পলিসি তৈরির পাশাপাশি দেশের তরুণদের জন্য বেশি কিছু করতে আলোর দিকে এগিয়ে এসেছে। বিডি সিগ, ইয়্যুথ আজিএফ, ওমেন আইজিএফ ও কিডস আইজিএফ এর সঙ্গে অনেক দূর এগিয়ে দিতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এনইআইআর এর মতো উদ্ভাবনী সল্যুশন নিয়ে এখন নেপাল ও পাকিস্তান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও ২০২৫ সালের মধ্যে ব্রডব্যান্ড খরচ মাথাপিছু আয়ের ২ শাতংশের নিচে রাখতে ইউএন ব্রডব্যান্ড কমিশন যে লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছিলো আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। এক দেশ এক রেট বাস্তবায়নে শহর-গ্রামের বৈষম্য দূর করেছি। ফলে পৃথিবীর ১৯০টি দেশের মধ্যে ডেটার খরচ কমের দিক দিয়ে পেছন থেকে অষ্টম বাংলাদেশ। তবে ইন্টারনেট মূল্য ফ্রি করে দেয়া হলে এর অপচয় হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ই-হেলথ বিশেষজ্ঞ ও আমাদের গ্রাম প্রতিষ্ঠাতা রেজা সেলিম, ফুডপ্যান্ডা সহ প্রতিষ্ঠাতা ও ই-ক্যাব পরিচালক সৈয়দা আম্বারিন রেজা।
ইন্টারনেট বেসিক নিড
আম্বারিন রেজা বলেন, ইন্টারনেট সবাইকে সংযুক্ত করে। তাই ইন্টারনেটকে নিরাপদ এবং এর সুশান নিশ্চিত করতে হলে তারুণ্যের ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। এটা খাবারের মতো বেসিক নিড। এই দুই সুবিধাকে কাজে লাগিয়েই এখন দেশের ৬৪ জেলায় ‘হোমসেইফ’ গড়ে উঠেছে। তরুণরা ফ্রিল্যান্স রাইডিং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। ফুডপ্যান্ডায় এমন অনেক তরুণ আছে যারা ঢাকায় এসে পার্টাইম রাইডিং করে পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছে। তাই ইন্টারনেট যতটা তরুণদের হাতের নাগালে আসবে দেশের অর্থনীতি ততবেশি চাঙ্গা হবে।
স্মার্টফোন সাধারণের নাগালে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে: টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী
ফেসবুক ৩৩ শতাংশ সময় নষ্ট করে
‘ইন্টারনেট মানেই সংযোগ বা কানেক্টিভিটি বলে মনে করি না’ উল্লেখ করে রেজা সেলিম বলেন, আমাদের যোগাযোগ দরকার। তবে কানেক্টিভিটি মানেই আমি ইন্টারনেট বা ইন্টারনেট সংযোগ বলে মনে করি না। ১৯৯৮ সালে যখন আমরা ডিজিটাল অপারচুনিটি টাস্কফোর্স তথা ডটফোর্স এবং গ্লোবাল নলেজ বা জিকে নিয়ে কাজ করতাম। আজ ইন্টারনেটের সুশাসনের পাশপাশি আমরা ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষায় আন্দোলন করছি। এরই অংশ হিসেবে আমি আমার মোবাইল ফোন/সিম নিতে গিয়ে আমার আঙুলের ছাপ দেইনি। দেড় দুই মাস আগে আমার আঙুলের ছাপের নিরাপত্তা দেয়ার পর আমি ভোটার হয়েছি, এনআইডি পেয়েছি।
ফেসবুক সময় নষ্ট করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি ফেসবুক ৩৩ শতাংশ প্রোডাক্টিভ সময় নষ্ট হয়। তাই আমি আমার ফেসবুক বন্ধ রেখেছি। নলেজ সোসাইটি তৈরি করতে আমি আমার জ্ঞানগ্রাম তথা রামপালের শ্রীফলতলায় ৯৭ শতাংশ মানুষ কম্পিউটার জানে। অবসরে তারা দাবা খেলে। এখানে গত কয়েক বছরে কোনো ইভটিজিংয়ের কোনো ঘটনা নেই।
নানা অভিমান করে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে রেডিও লিংক এর মাধ্যমে ওয়ারলেস টাওয়ার করে গ্রামে ইন্টারনেট সেবা চালুর আবেদন করেন রেজা সেলিম। তিনি বলেন, মোস্তাফা জব্বারের কল্যাণে আমি আমার এলাকায় বিটিসিএল এর ১০০ এমবিপিএস ইন্টারনেট পেয়েছি।
সেইফ ইন্টারনেটে ১০ শতাংশ ইন্টারনেট বাঁচে
মালোয়েশিয়ার নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ‘ফ্যামিলি ইন্টারনেট সেফটি’ ব্যবহার করলে দেশে ১০ শতাংশ ব্যাড ট্রাফিক সেইভ হয়’ উল্লেখ করে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধরা ডটলাইন পরিচালক তারেক মঈনুদ্দীন বলে, এই হিসেবে যদি দিনে এক হাজার কোটি টাকার ব্যান্ডউইথ বাঁচবে।
দুই দিনে মোট ৭টি সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষে সাইবার কুটনীতিক হিসেবে সন পান মোছাঃ বৈশাখী খাতুন, মাসুম বিল্লাহ এবং প্রতিভা ব্যনার্জী। দুই দিনের ওয়াই আইজিএফ ২০২২ উপলক্ষে সেরা ভিডিও কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে সম্মাননা দেয়া হয়।
এছাড়াও সম্মাননা দেয়া হয় ইয়্যুথ আইজএফ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ার ফয়সাল আহমেদ ভূবন, কো-চেয়ার রিয়াদ হোসেন বাদশা, নাজমুল হাসান মজুমদার, সৈয়দা তামিম জাহান রিপা, বিডি সিগ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আশরাফুর রহমান পিয়াস, ইউমেন আইজিএফ আহ্বায়ক ফরাহ মাহমুদ তৃণা, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিরেন পন্ডিত, ইকবাল আহমেদকে।