‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্প পূরণে ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, কো-ওয়ার্কিং স্পেস ও সিড মানি দিয়ে সর্বাত্মক কাজ করবে আইসিটি বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে প্রতিশ্রুত ২০০০ নারী উদ্যোক্তাকে অনুদান দেয়ার দ্বিতীয় ধাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম দিনে আরো ১০০০ হাজার নারীকে অনুদান দেয়া হবে। ২৮ সেপ্টেম্বরের পর দেয়া অনুদান দেয়া হবে বাকিদের। এর বাইরে কোনো উদ্যোক্তা যেনো ব্যর্থ না হন সে জন্য ই-ক্যাব সভাপতির নেতৃত্বে নারী উদ্যোক্তাদের উই, আনন্দ মেলা, ওয়েব আরো ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হবে।
সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে আইসটি টাওয়ারের সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাচিত ২৫০ নারী উদ্যোক্তার হাতে প্রথম ‘বঙ্গমাতা অদম্য উদ্যোক্তা’ অনুদানের ডামি চেক তুলে দেয়ার আগে দেয়া বক্তব্যে এসব প্রতিশ্রুতি দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে ‘নারী উদ্যোক্তাদের ব্যর্থ হওয়ার হার পুরুষদের চেয়ে কম’ মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মায়েরা-মেয়েরা মিতব্যায়ী ও সাশ্রয়ী। আমি মনে করি এই অর্থ বিফলে যাবে না।
অনুদান অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটাই শেষ নয়; প্রতিবছর ৮ আগস্ট ১০০০ বঙ্গমাতা অদম্য উদ্যোক্তাকে অনুদান দেয়া হবে। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প পূরণে ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, কো-ওয়ার্কিং স্পেস ও সিড মানি দিয়ে সর্বাত্মক কাজ করবে আইসিটি বিভাগ।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর সকল আন্দোলন, সংগ্রামের নেপথ্যের প্রেরণাদায়ী এবং প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অফুরান প্রেরণার উৎস মহীয়সী নারী ফজিলাতুন ন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তাঁর কর্মকাণ্ডকে পূর্ণতা দিয়েছেন বেগম মুজিব। আর বঙ্গমাতার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা’ সাদামাটা জীবন যাপন করেন।
আইডিয়া প্রকল্প পরিচালক মোঃ আলতাফ হোসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইসটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বিসিসি ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রণজিৎ কুমার, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ও উই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ওয়েব সভাপতি রুপা আহমেদ এবং ইউএনডিপি এর আনন্দমেলা উদ্যোগের পরামর্শক সারাহ জিতা ।
উই সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, আজ অনুদান দেয়া শুরু হলো। তাই আজ যারা পাননি তারাও আগামীতে পাবেন। কেউ পাবেন না এমন হবে না। তাই সবাই নিজের উদ্যোগের দিকের দিকে খেয়াল রাখবেন। আর ভাগ্যক্রমে আজ আমার জন্মদিন হওয়ায় বঙ্গমাতা যেভাবে নিজেকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন আমি যেনো আমার নারী উদ্যোক্তা ও দেশের জন্য কিছু করতে পারি আপনারা সেই দোআ করবেন।
নিজ মায়ের রচিত কবিতায় বঙ্গমাতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, আমার কাছে বঙ্গমাতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধুর মতোই একজন নিরব রূপকার। বাংলাদেশের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিলো না। তবে তার আলোয় আলোকিত হয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু থেকে তার পরিবারের সকলে। আর বঙ্গবন্ধুর আলোয় আলোকিত হয়েছে সারা দেশ।
শমী আরো বলেন, আজকের অনুদার নারী উদ্যোক্তার কনফিডেন্ট বাড়িয়ে দেবে। এই অর্থ তার অ্যাকাউন্টে যখন যাবে তখন সে বুক ফুলিয়ে ভাববে আমি করতে পারি। এই আস্থাটি আইডিয়া প্রকল্প থেকে নেয়ায় আমাদের কৃতজ্ঞতা। কেননা এই গ্র্যান্ট হয়তো নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন দেশের সীমানা পেরিয়ে অনেকদূর নিয়ে যাবে।
আয়োজনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউএনডিপি’র আনন্দমেলা প্রকল্পের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট সারাহ জিতা বলেন, একজন নারী উদ্যোক্তার জন্য ৫ হাজার টাকা পাওয়াটা ঘর থেকে বাইরে সবক্ষেত্রেই যখন খুব কঠীন একটা ব্যাপার; তখন ৫০ হাজার টাকা অনুদান স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণে অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটি নারী উদ্যোক্তার ব্যবসাকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাবে। কারণ আমরা জানি, স্মার্টবাংলাদেশ তৈরি করতে হলে আমাদের প্রযুক্তি নির্ভর হতেই হবে। ব্যবসাকেও প্রযুক্তি নির্ভর করতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইসিটি ভবনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ অনন্য প্রতিনিধিবৃন্দ। এরপর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সম্মেলন কক্ষে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার পর থেকে আমরা ডিজরাপ্টিং ওয়েতে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেয়েছি। এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় কোনো বাধা বা বিপত্তি নেই। এবার হার পাওয়ার প্রকল্পে ৪১টি জেলায় নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এভাবেই ইনক্লুসিভ উন্নয়নের মাধ্যমে নারীরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সামনের দিকে চলে আসবে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিয়া প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আর এইচ এম আলাওল কবির জানান, স্টার্টআপদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান (এসএমই), উদ্যোক্তা, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন, উৎসাহ প্রদান এবং তাদের ব্যবসায়কে ত্বরান্বিত করতে অনুদান প্রদানের এই উদ্যোগ গ্রহণ করে আইডিয়া প্রকল্প। এরই প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম/অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ আইডিয়া প্রকল্প কর্তৃক গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষে ২৫০ উদ্যোক্তা নির্বাচন করা হয়। ই-ক্যাব থেকে ২০, উই থেকে ১৮৮, আনন্দমেলা থেকে ৩১ এবং ওয়েব থেকে ১১ অর্থাৎ সর্বমোট ২৫০ জন নারী উদ্যোক্তাকে আইডিয়া প্রকল্প থেকে মোট ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। অনুদান প্রাপ্ত ২৫০ জন নারী উদ্যোক্তাদের অনেকেই এটুআই-এর একশপ প্ল্যাটফর্মের সাথেও সংযুক্ত আছেন। অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪ জন ট্রান্সজেন্ডার উদ্যোক্তা এবং ১জন শারীরিরি প্রতিবন্ধীও রয়েছেন; যাদের সবাই প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন।
উদ্যোগটিতে সহযোগিতায় কাজ করেছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), উইমেন এন্ড ই-কমার্স (উই), আনন্দমেলা এবং উইমেন অন্ট্রপ্রিনিউরস্ অব বাংলাদেশ (ওয়েব)। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের অধীন এটুআই উদ্যোগের ই-কমার্স প্লাটফর্ম একশপ টিম লিড রেজওয়ানুল হক জামি।