পৃথিবীজুড়েেই চলছে অস্থিরতা। করোনার পার মানবসৃষ্ট যুদ্ধের দমামা কেবল ভোক্তাদেরই নয় ভাবিয়ে তুলেছে উৎপাদক ও ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিশনারদের। সাধ-সাধ্যের মধ্যে হিসাব কষতে গিয়ে ভোক্তা আচরণ যেমন পরিবর্তীত হচ্ছে তেমনি মান আর দামের মল্লযুদ্ধে চরম কৃচ্ছ্রতা সাধনে নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো। এক্ষেত্রে বিপননে প্রযুক্তি সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও নাগরিক জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহারে কেনাকাটার অভ্যস্ততায় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর নড়বড়ে অবস্থান এবং আস্থা সঙ্কট কাটাতে ডেটা ভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা, বিপনন মিক্স তৈরি এবং সর্বপরী ভোক্তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনকে গুরুত্ব দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। পরামর্শ এসেছে অফলাইন-অনলাইন উভয় দুনিয়াতেই ব্র্যান্ডকে পরিচিত করাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের মাধ্যমে ভোক্তাকে আরো নিবিড় ভাবে যেনে তবেই যেনো বিপননে পা বাড়ান ব্র্যান্ড প্রাক্টিশনাররা।
শুক্রবার রাতে ফুড অ্যান্ড বেভারিজ মার্কেটিং ফেস্ট ২.০ এর সমাপনী অধিবেশনে এসব পরামর্শ দিয়েছেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা।
সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে মার্কেটিং এর ৪পি থেকে সি-কে বেশি গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে উপস্থিত ব্র্যান্ড কর্মী ও উদ্যোক্তাদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, করোনা অতিক্রম হয়েছে। তবে মানুষের যুদ্ধ শেষ হবে না। তাই বিচলিত না হয়ে সম্ভাব্য হুমকীর তালিকা করে ব্র্যান্ড প্রাকটিশনারদের আগাম প্রস্তুতি নেয়ার পরার্শ দিয়েছেন । এক্ষেত্রে ফুড মার্কেটিংয়ে যারা আছেন তাদের নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী ভাবার কারণ নেই। কেননা মার্কেট পয়েন্ট অব ভিউতে এখন নতুন নতুন প্রতিযোগী আছে। এই যেমন, নগরীতে লেবুর শরবত এখন সফট ড্রিংকসের পরিপূরক হতে চলেছে। তাই শহরের তুলনায় গ্রামের বাজারে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কেননা গ্রামীণ অর্থনীতিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাড়ছে রেমিটেন্স। করোনা পরবর্তীতে রেমিনেন্ট দ্বিগুণ হয়েছে। কার্ভ মার্কেট এবং হুন্ডির কারণে ডলার সঙ্কট কেটে যাবে। পুরো বাজারকে দৃষ্টি দিয়ে মানকে সমুন্বত রেখে ব্র্যান্ড প্রমোশন বাড়াতে হবে।
আর সময়ের ঘাত মোকাবেলায় প্যাকেজিং খরচ কমানোর পরামর্শ দেন তিনি। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে কৃচ্ছ্রতা সাধনে গুরুত্বারো করেন আকিজ ভেঞ্চর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আলমগীর।
আইবিএ সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় এই অধিবেশনে তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়লেও অনলাইন সেলসের কন্ট্রিবিউশন ২ শতাংশের কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো আমাদের দেশের মানুষ অনলাইন পছন্দ করে না। প্রক্সিমিটির কারণে আরো সময় লাগবে। কিছু দুর্ঘটনার কারণে আস্থা ফিরিয়ে আনতেও সময় লাগবে। অবশ্য আমরা মেয়েরা অনলাইনে অর্ডার করে। আমার মনে হয় আমার নাতিরা অনলাইন কেনকাটায় বুঁদ হবে।
ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স বাংলাদেশের উদ্যোগে খাদ্যপণ্যের বিপণন খাতের সম্ভাবনা ও বাস্তবতা নিয়ে দিনব্যাপী এই আয়োজনে বিশ্বব্যাপী দাম বৃদ্ধির প্রভাবে খাদ্য ও পানীয় পণ্যের মার্কেটিংয়ের চ্যালেঞ্জ, সংকটের সমাধান ও বাস্তবতা বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। দেশের স্বনামধন্য খাদ্য এবং পানীয় কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা, প্রধান ব্র্যান্ড কর্মকর্তা, বিক্রয় কর্মকর্তা, সাপ্লাই চেইন প্রধান, বাজার গবেষক, রেগুলেটরি কর্মকর্তা, কমিউনিকেশন ক্ষেত্রের পেশাজীবী এবং তিন শতাধিক মার্কেটিং পেশাজীবী।
বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন মিডিয়াকমের সিইও অজয় কুমার কুন্ডু, সিটি গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জাফর উদ্দিন সিদ্দিকী, টিকে গ্রুপের ডিরেক্টর (মার্কেটিং অপারেসন্স) মোফাসসেল হক, নেসলে’র ডিরেক্টর সৈয়দ ইকবাল মাহমুদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এ কে এম মঈন উদ্দিন, মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র জিএম কাজী মহিউদ্দিন এবং আরও প্রাজ্ঞ ফুড মার্কেটিং পেশাজীবীরা।
এই ফেস্টের টাইটেল স্পন্সর ছিল নেসলে বাংলাদেশ। পাওয়ার্ড পৃষ্ঠপোষক ছিলো দেশের অন্যতম বেভারেজ ব্র্যান্ড মোজো ও ভোগ্য পণ্যের ব্র্যান্ড পুষ্টি।