এবারো ডিজিটাল হাট থেকে গরু বায়না দিয়ে এই হাটের আনুষ্ঠানিক বিক্রি কার্যক্রমে অংশ নিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। হাটের ‘আনন্দমেলা’ থেকে ৭১ হাজার ২৫০ টাকা দিয়ে ১৫০ কেজি ওজনের ধূসর রঙের একটি গরু কিনেছেন তিনি। তবে এবার তিনি নতুন করে যুক্ত হওয়া একপে’র এসক্রো সেবার আংশিক মূল্য পরিশোধ সুবিধা গ্রহণ করেন মূল্য দিয়েছেন। এসময় তার পক্ষে ইউসিবিএল কার্ড দিয়ে ৭১২৫ টাকা পরিশোধ করা হয়।
রোববার বিকেলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ডিজিটাল কোরবানি হাটের উদ্বোধনের সময় এই গরুটি কেনেন মন্ত্রী। যথারীতি ই-ক্যাবের মানবসেবা প্রকল্পের মাধ্যমে এটি সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মাঝে বিতরণ করার অনুরোধ করেন তিনি।
মন্ত্রী গরুটি কেনার পরপরই এই ডিজিটাল হাটে ঢু মারেন ৫ হাজার ১৭৮ জন ক্রেতা দর্শনার্থী।
এসময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি জানান, এবার ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু মজুত রয়েছে। ফলে কোরবানির জন্য কোনোরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই।
রেজাউল করিম বলেন, ‘কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। রোগগ্রস্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ হয়রানির শিকার হবেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োগ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়াও অনলাইনে কেনা কোনো কোরবানীর পশুরু হাসিল দিতে হবে না এবং কোরবানীর পরেও এই হাট চলবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ই-কমার্সে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ৪টি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আরো শক্তিশালী বিশ্বাসযোগ্য একটি ই-কমার্স ইকো সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যেই ডিজিটাল বিজনেস আইডি (ডিবিআইডি) চালু করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত ১৬০০ ডিবিআইডি নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়েছে। ৪০০ রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই ১৬০০ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী লস্টিক ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা সম্ভব হবে। তৃতীয় কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সেন্টারও তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রী সময় দিলেই এটি অল্পদিনের মধ্যে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। আর আইসিটি উপদেষ্টা মহদোয়ের পরিকল্পনা অনুায়ী, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত একটি ফাইন্যান্সিয়াল ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে ‘বিনিময়’ খুব শিগগিরি উদ্বোধন করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, পশু ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা খাতের একটি বড় লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ডিজিটাল হাটকে যদি সারা বছর করা যায়, তাহলে প্রান্তিক চাষি ও খামারিরা সারা বছর অনলাইনে পশু বিক্রির সুযোগ পাবে।
এবার ডিজিটাল হাটে দুটো নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গরুর ওজন মাপার ডিজিটাল ক্যালকুলেটর এবং পূর্বাচলে গরু রাখার জন্য একটি জায়গাও রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্মে যারা পশু বিক্রি করবেন তাদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানানো হয়।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ২০২০ ও ২০২১ সালে অনলাইন কোরবানি হাট হিসেবে ডিজিটাল হাটের সফল বাস্তবায়ন করেছে ই-ক্যাব। ২০২০ সালে ২৭ হাজার এবং ২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি করে মাইলফলক সৃষ্টি করেছে ডিজিটাল হাট। আমাদের কর্মীরা ঈদের দিন কাজ করে নিজেদের ঈদের খুশি অন্যদের জন্য পরিত্যাগ করেছেন।
গত বছর ডিজিটাল হাটে পরীক্ষামূলকভাবে এসক্রো সুবিধা রাখা হয়েছিল। এবারও সেটা থাকছে। এবারও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের ডিজিটাল হাটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘ই-ক্যাবের উদ্যোগে পর পর ৩ বার এই ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন হচ্ছে। সরকারের ৪ জন মন্ত্রী এই হাট থেকে পশু কিনেছেন। এই ধরনের জীবন্ত প্রাণী এবং উচ্চমূল্যের এ ধরনের সর্বজনীন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিশ্বে খুব বিরল। আমরা আশা করছি এবারও কার্যক্রম সফল হবে।’