দেশের কিংবদন্তী পরমাণু বিজ্ঞানীর জন্মভূমি রংপুরের হারাগাছ থানার খলিশা কুড়িতে তাঁর নামেই “ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাই-টেক পার্ক” এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো আজ ( ২৬ মে ২০২২; বৃহস্পতিবার)। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক এর অধীন জেলা পর্যায়ে আইটি /হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পের আওতায় এই পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মাধ্যমে এই ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এসময় তিনি মহতী এই উদ্যোগের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কে ধন্যবাদ জানান।
রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এই হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে এক অনাড়ম্বর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উক্ত অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত একারণে যে আজ রংপুরে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাই-টেক পার্ক এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে। এর মাধ্যমে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন রংপুরবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নাই। আর এজন্যই আমরা একটি প্রযুক্তিনির্ভর জাতি গড়ে তুলতে চাই।
তিনি আরো বলেন, রংপুর সবসময়ই অবহেলিত এলাকা ছিলো, এখানে কখনো শিল্পায়ন হয়নি। রংপুরবাসীর উন্নয়নে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাই-টেক পার্কের মাধ্যমে এখানকার তরুণ-তরুণীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হলো। এই পার্কে তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় অনেকেই বিদ্রুপ করেছে। অথচ এই ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে নীরবে-নিভৃতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গিয়েছেন। শিক্ষা জীবনে তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন ষাট এর দশকে। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৬২ সালে তিনি আটক হন, কিছু দিন জেলও খাটেন। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর গবেষণা কর্মের পরিধি ছিল ব্যাপক। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া শুধু তার কাজের জন্য নয়, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন। এ কারণে আমরা এই হাই-টেক পার্কের নামকরণ রংপুরের এই কৃতি সন্তানের নামে করতে চাই। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাই-টেক পার্ক, রংপুরের কাজ শুরু হলো।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ১৯০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে ১২৩টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদার দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্যমে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে ৩৬০০০ জন। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইসিটি খাতে প্রায় ২২০০০ জনের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুর সদরের খলিশাকুড়িতে ১০.৬৮ একর জমিতে এই হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হলে এখানে প্রায় ৩০০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ , রংপুরের পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা পর্যায়ে আইটি /হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক একেএম ফজলুল হক, এলএডিপি প্রকল্প পরিচালক হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এড, হোসনে আরা লুৎফা, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিউর রহমান সফি, ড. ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল, আইসিটি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।