স্মার্টফোন-ফেসবুক আসক্তি, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা এবং অনিদ্রার কারণে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের এক-তৃতীয়াংশ (৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ) চরম মাত্রায় নোমোফোবিয়ায় আসক্ত হয়ে উঠেছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এ আসক্তি সবচেয়ে বেশি। মোবাইল ফোন কাছে না থাকার এই আতঙ্ক (নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া) নিয়ে গবেষণাটি হয়েছৈ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির ৫৮৫ জন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে।
জরিপ অনুযায়ী, মাঝারি মাত্রার নোমোফোবিয়ায় আসক্ত ৫৬ দশমিক এক শতাংশ। আর ৯ দশমিক চার শতাংশ শিক্ষার্থী মৃদু নোমোফোবিয়ায় আসক্ত।
জরিপ নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদনটি চলতি বছরের মার্চে হেলিয়ন জার্নালে গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলেও একই বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ পায়। তবে এবারের নিবন্ধটি আগেরটির তুলনায় কলেবরে বেশ বিস্তৃত।
নিবন্ধটির গবেষকরা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ-আল-মামুন, মোহাম্মদ এ মামুন, মুক্তারুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক তাজউদ্দিন শিকদার, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সালাউজ্জামান প্রধান, নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি বিভাগের মার্ক ডি গ্রিফিটস এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার পাবলিক হেলথ বিভাগের মোহাম্মদ মুহিত।
এ বিষয়ে নিবন্ধটির গবেষক ফিরোজ-আল-মামুন জানিছেন, নোমোফোবিয়া বা মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার ভয় একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। আমাদের জীবনযাত্রা এখন অনেকাংশে মোবাইল ফোন নির্ভর হয়ে পড়েছে। তার ভাষায়, নোমোফোবিয়া আমাদের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দিতে পারে এবং এটি বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সঙ্গে জড়িত। সমস্যাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করেছে।
দৈনিক স্মার্টফোন ব্যবহারে সময় কমানো এবং মাদকসেবন থেকে বিরত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নোমোফোবিয়ার প্রকটতা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন এ গবেষক।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, স্মার্টফোন প্রাত্যহিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ এবং যুবকদের নিত্যদিনের জীবনে স্মার্টফোন বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে চলছে। তবে মাত্রাতিরিক্ত এবং অসচেতন ব্যবহার যুবসমাজকে নোমোফোবিয়ার দিকে ধাবিত করে। যেটাকে একধরনের ‘মানসিক সমস্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এতে আরও বলা হয়, বতর্মান বিশ্বে এ আসক্তিটি চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের মধ্যে এটি বেড়েই চলছে। ওমানের একটি জরিপ বলছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের মধ্যে মাঝারি ধরনের নোমোফোবিয়ায় আসক্ত ১৫ শতাংশ। আর চরম হারে আসক্ত ৬৫ শতাংশ।
ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা গেছে, ৩৫ দশমিক চার শতাংশ চরমভাবে এবং ৫৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ মাঝারি মাত্রায় আসক্ত। সৌদি আরবে চরম মাত্রায় ২২ দশমিক এক শতাংশ এবং মৃদুমাত্রায় ৬৩ দশমিক দুই শতাংশ।
নোমোফোবিয়ার কারণ হিসেবে স্মার্টফোন-ফেসবুক আসক্তি, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা এবং অনিদ্রাকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, স্মার্টফোনে বারবার কল বা মেসেজ চেক করার প্রবণতা, ঘুম ভাঙামাত্রই ফোনটি খুঁজে দেখা, সাক্ষাতে কথা না বলে ভার্চুয়ালি কথাবার্তায় ঝোঁক থাকা, সব জায়গায় স্মার্টফোন নিয়ে যাওয়া, এমনকী স্মার্টফোন নিয়ে টয়লেটে যাওয়া, ফোনটিকে কখনো সুইচ অফ না করা, বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই স্ক্রল করে যাওয়া, ফোনটি হারানোর ভয়ে থাকা এবং দৈনিক ৩ ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করা, মোবাইলের চার্জ, ব্যালেন্স বা ডেটা শেষ হয়ে গেলে অধিকমাত্রায় উদ্বিগ্ন হওয়া, ওয়াইফাই সিগন্যালের জন্য বারবার রিফ্রেশ করা এবং মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকলে অনলাইন পরিচিতি কমে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি নোমোফোবিয়ার লক্ষণ।