অতিমারি করোনামুক্তির বছর পাঁচেকের পর এবার নতুন মহামারির বার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চীন এবং জাপানে দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নামের ভাইরাস নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এইচএমপিভি এমন একটি ভাইরাস যা উপরের এবং নিচের শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। সিডিসির দেওয়া তথ্য অনুসারে, সব বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ইমিউনিটি দুর্বল তারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঝুঁকির প্রতিকার হিসেবে চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাসও প্রতিরোধ করা সম্ভব। টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার মধ্য দিয়ে এইচএমপিভি থেকে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
প্রায় দুই দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি ভাইরাস উপস্থিতি জানান দিলেও এখন পর্যন্ত এর টিকা আবিষ্কার হয়নি।
এইচএমপিভি ভাইরাস চীন থেকে যাতে করোনার মতো ভারতে ছড়িয়ে না পড়ে, তাই আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে আছে ভারত। দেশটির এনডিটিভি’র খবর অনুযায়ী, চীনে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে বলে খবর ছড়াচ্ছে। যদিও এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে এবং কোভিড-১৯-এর মতো উপসর্গও দেখা যেতে পারে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে।
তবে চীনের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি প্রকট হয়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা দেশটির সরকার সতর্কতা জারি করেনি। যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে করে যেকোনো সময়ে দেশটি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলেও দাবি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এইচএমপিভি ভাইরাসটিকে প্রথমবার শনাক্ত করা হয়েছিল ২০০১ সালে। এটি মূলত ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায় এবং সব বয়সী লোকজনকেই আক্রান্ত করে। তবে শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষক ড. মাইকেল হেড বলেছেন, ‘একটি মহামারির শঙ্কা করা হচ্ছে, তবে এখনো কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে; সেটি নিশ্চিত না বলে আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিস-এক্স। ’
হাম, কলেরা, বার্ড-ফ্লু এবং স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসকদের কপালে।
চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সময়ে হাসপাতালে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও। একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানের। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ৭ লাখেরও বেশি।
হেড আরও বলেন, ‘আগামীর মহামারির প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে এবং মানুষের মৃত্যুহার পৌঁছাবে সর্বোচ্চে।