দশক পেরিয়ে কোটি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে মুঠোফোনে ব্যাংকিং সেবা বা এমএফএস। আত্মপ্রকাশের একাদশতম বছরে এসে দফায় দফায় এই খাতের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ভাঁটার টান। জুলাইয়ের মতো সেপ্টেম্বরের উল্লম্ফন মিলিয়ে গেছে নভেম্বরে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেবার আওতা এবং গ্রাহক বাড়লেও কমেছে মুঠোফোনে লেনদেন। এমএফএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, উত্তোলন, বেতন-ভাতা সবকিছু মিলিয়ে এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৮৮৭ কোটি টাকা।
গত বছরের অক্টোবরে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা লেনদেন হলেও নভেম্বরে নেমে দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ১২৫ টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, টানা দুই মাস মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনে ভাটার টানের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে লেনদেন ও গ্রাহক দুই ক্ষেত্রেই উল্লম্ফন হয়েছিলো। ওই মাসেই প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে রাষ্ট্রিয় এমএমএস প্রতিষ্ঠান নগদ-এর মাধ্যমে করা লেনদেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ধারা অব্যাহত থাকার পরও জুনের চেয়েও কম লেনদেন হয়েছে নভেম্বরে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জুনে লেনদেন হয়েছিলো ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এর পরের মাস জুলাইয়ে লেনদেন এক হাজার ৭২৩ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকায়। একইভাবে আগস্টে লেনদেন আরো কমে ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকায় ঠেকে।
তবে ওই সময় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে ১৮ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ৬১০ জনে পৌঁছে। এর পরের মাসেই সেপ্টেম্বরে মোবাইল ফাইন্যান্সে নতুন গ্রাহক যুক্ত হয় আরো ২০ লাখ। এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন বাড়ে ২৩৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ৮৭ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। পরের মাসে লেনদেন আরো বেড়ে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি টাকায় পৌঁছে।
কিন্তু নভেম্বরে এসে লেনদেন ৮৮৭ কোটি টাকা কমে ৯২ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় এসে ঠেকলেও এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাব বেড়েছে ১০ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৩টি।
অর্থাৎ লেনদেনে কমলেও নিবন্ধিত গ্রাহক নিয়মিত বাড়ছেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বরে নিবন্ধিত হিসাব ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৬টি। এর আগে অক্টোবর মাস শেষে নিবন্ধিত হিসাব ছিল ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৩টি। এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাব বেড়েছে ১০ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৩টি।
এসব হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১০ কোটি ৯০ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭৪ জন এবং নারী গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫০ জনে। অক্টোবরে সারাদেশে পুরুষ গ্রাহক ছিল ১০ কোটি ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৮২৪ জন এবং নারী সাত কোটি ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৬ জন।
এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৩১ হাজার ৪০৫টি। অক্টোবরে এজেন্ট ছিল ১৫ লাখ ২১ হাজার ৮০৩টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
নভেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো হয়েছে ২৯ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ২৬ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরের বছরের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরই মধ্যে গ্রাহকসেবায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এমএফএস হয়ে ওঠে ডাক বিভাগের সেবা নগদ।
এদিকে চার মাস আগে ‘নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি’ নামে নতুন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির অধীনে মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) কার্যক্রম চালাতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধন অনুযায়ী, বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে।