শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে। আগে না থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে নিয়মিত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের ‘নগদ’ হিসাবও। অক্টোবরে এসে এক মাসে নিবন্ধিত সেবা গ্রাহক বেড়েছে ২২ লাখের বেশি। লেনদেন বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবর মাস শেষে নিবন্ধিত হিসাব দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৩টিতে। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৫২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩২টি। তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাব বেড়েছে ২২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১টি।
এসব হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১০ কোটি ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৮১৪ জন এবং নারী গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৬ জনে। সেপ্টেম্বরে সারাদেশে পুরুষ গ্রাহক ছিল ১০ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার ৫৪ জন এবং নারী সাত কোটি ৭৫ লাখ ৩২ হাজার ৭৮২ জন।
এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ২১ হাজার ৮০৩টি। সেপ্টেম্বরে এজেন্টের সংখ্যা ১৫ লাখ ৫ হাজার ৩২১টি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অক্টোবরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ৮৭ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৫ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা।
এর আগে আগস্টে লেনদেনে ছিল ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। জুনে লেনদেন ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
চলতি বছর এপ্রিলে একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন লাখ কোটি টাকা ছাড়িযে যায়। লেনদেন হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ টাকা। এরপরে মে মাসে লেনদেন কমে হয় ৭৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে।
রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
অক্টোবরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো হয়েছে ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ২৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা।
এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২৫ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।
বিভিন্ন পরিষেবার দুই হাজার ২৮৩ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটার তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।