সম্প্রতি রেকর্ডসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে গেলেও দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তারপরও অক্টোবরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স গত বছরের তুলনায় কমে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৫২ কিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরেও রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিও এর আগের মাসের তুলনায় ১ শতাংশ কমেছে। এর কারণ অনুসন্ধানে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনায় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশ, রকেট ও নগদের প্রায় ২৩০ গ্রাহকের হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ফলে কোনো গ্রাহক এসব হিসাব থেকে টাকা তুলতে পারবেন না।
তবে বৈধ পথে টাকা পাঠানোর শর্ত মানলে হিসাবগুলো আবার খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএফআইইউ। বিএফআইইউ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুধবার এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেনছেন, ‘বিএফআইইউ ২৩০টির বেশি গ্রাহকের হিসাব জব্দ করেছে বলে আমি জানি।’ তবে এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় নগদের সঙ্গে। তবে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৫ হাজার ৪১৮ এমএফএস এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যার মধ্যে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের প্রিয়জনদের জানানো যাচ্ছে যে, কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে) পাঠানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাই মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে না পাঠিয়ে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রচলিত আইনে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ব্যাংকিং চ্যানেলের বদলে অবৈধভাবে হুন্ডিতে অর্থ পাঠানোর কারণ, সেখানে ডলারের দর বেশি পাওয়া যায়। প্রতি ডলারের বিপরীতে তিন থেকে চার টাকার ব্যবধান অনেককেই এভাবে অর্থ পাঠানোয় আগ্রহী করছে।
খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দর এখন ১১২ টাকা। ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে ১০৭ টাকা পাওয়া যায়। তার সঙ্গে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা যোগ হয়ে পাওয়া যায় ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে, যার নামে পাঠান তিনি ১১৩ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন।
সে কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে রেমিট্যান্স গত বছরের চেয়ে ২ দশমিক ০৩ শতাংশ কমে ৭ দশমিক ১৯ বিয়িলয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে ৮ লাখ ৭৫ হাজার অভিবাসীশ্রমিক চাকরির জন্য বিদেশে গেলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। ২০২১ সালে গিয়েছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার এবং ২০২০ সালে ২ লাখ ১৭ হাজার। পরিসংখ্যান বলছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মতো নভেম্বর মাসেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের ১১ দিনে ৬৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ডলার এসেছে দেশে।