‘অনিয়ন্ত্রিত ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেন দ্রুত বাড়ছে’ উল্লেখ করে দেশে যে কোনো ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে এর আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের এর চিঠির জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিলো ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’র মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন অপরাধ নয়। গত বছরের ১৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সহকারী পরিচালক শফিউল আজম সিআইডিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ব্যাংকের অবস্থান বিষয়ে লেখেছিন, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটিকে অপরাধ বলার সুযোগ নেই মর্মে প্রতীয়মান হয়।’
ওই চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের ফলাফল হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭; সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর আওতায় অপরাধ হতে পারে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিআইডি এ নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পারে।
এমন পরিস্থিতে বিটকয়েনসহ সব ধরনের ক্রিপ্টো কারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহারে ফের সতর্ক করে এর লেনদেন থেকে বিরত থাকতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি গোপনেই দেশে অনিয়ন্ত্রিত ভার্চুয়াল মুদ্রা অন্য কিছু বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে বিনিময় হচ্ছে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর যারাই এই কাজ করছেন তা দণ্ডনীয় বিধায় এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ারও ইঙ্গিত দিয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক নোটিশ দিয়ে সবাইকে সতর্ক করেছে।
নোটিশে বলা হয়, যে কোনো ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন বা আইনগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ অনুযায়ী ভার্চুয়াল কোনো মুদ্রার কোনো স্বীকৃতি নেই। ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ভার্চুয়াল সম্পদের বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবির সুযোগ নেই এবং কোনো আইন এ ধরনের সম্পদের গ্যারান্টি দেয় না।
এ অবস্থায় ভার্চুয়াল মুদ্রার মানকে দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং উচ্চ আর্থিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ কোনো দেশের বৈধ কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনও ভার্চুায়াল মুদ্রার স্বীকৃতি দেয়নি। আর ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
প্রসঙ্গত, ক্রিপ্টোকারেন্সি হল বাইনারি উপাত্তের একটি সংকলন যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এর অস্তিত্ব শুধু ইন্টারনেট জগতেই বিদ্যমান। এটি ব্যবহার করে লেনদেন শুধু অনলাইনেই সম্ভব যার পুরো কার্যক্রম গুপ্তলিখন নামক একটি সুরক্ষিত প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। ২০১৭ সাল থেকে এটি একটি উঠতি বাজারে পরিণত হয়েছে।
ওই বছরই ভার্চুয়াল মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনসহ ইথেরিয়াম, রিপল ও লিটকয়েনের লেনদেন নিয়ে সতর্ক করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বিটকয়েন লেনদেনে অর্থ পাচারের আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়।
গত বছরের মাঝামাঝি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক চিঠির বরাত দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন বাংলাদেশের আইনে ‘অপরাধ নয়’ বলা হলে এবিষয়ে ফের সতর্ক করা হয়।
ওই বছর জুলাই মাসে দেওয়া নির্দেশনায় সতর্ক কর জানানো হয়, ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিটি বহাল আছে।