দেশে ক্রমেই বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন। এরমধ্যে প্রবৃদ্ধির ধারায় সবচেয়ে এগিয়ে মোবাইল লেনদেন। গত জুলাই শেষে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বা এমএফএস অ্যাকাউন্টে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ১১ লাখে। এটিএম কার্ডের গ্রাহক ছাড়িয়েছে সাড়ে ৪ কোটির মাইলফলক। এরমধ্যে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ছিলো ১৯ লাখ ৪১ হাজার। সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ২৫ হাজার ১৬৪।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৩৬২। জানুয়ারিতে সেটা সামান্য বেড়ে হয় ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৩টি। অপরদিকে ২০২১ সাল শেষে ডেবিট কার্ড ছিল দুই কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৯টি। এ বছরের জানুয়ারিতে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় দুই কোটি ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬৮টিতে।
অর্থাৎ ছয় মাসে ক্রেডি কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫২ হাজার ৭৭টি বাড়লেও গত ৮ মাসে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা কমেছে ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪টি।
তবে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়ছেই। দেশে মোবাইলে মোট আর্থিক লেনদেনকারীদের (এমএফএস) মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ১০ কোটি ৭ লাখ এবং শহরে ৮ কোটি ৪ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের সেবা দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে ১৫ লাখ ২৬ হাজার এজেন্ট। তবে ঠিক কত মানুষ সেবাটি ব্যবহার করছেন, সেই হিসাব নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে। অবশ্য সক্রিয় ব্যবহারকারী অর্ধেকের কম বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপরও ১২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের দেশে এই সংখ্যাও নেহাত কম নয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এগিয়ে রয়েছে গ্রাম। শহর থেকে
মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আর্থিক সেবা গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি, একই ব্যক্তি একাধিক হিসাব খোলার সুযোগসহ বিভিন্ন কারণে দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে এমএফএস হিসাবের সংখ্যা বেশি দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত জুন মাস শেষে দেশে এমএফএস অ্যাকাউন্ট ছিল ১৭ কোটি ৮৬ লাখ। আর গত বছরের জুলাই শেষে এই অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৬০ লাখ। বর্তমানে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ ১৬টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে আছে। এর মানে, একজন সর্বোচ্চ ১৬টি পর্যন্ত এমএফএস হিসাব খুলতে পারেন। এর মধ্যে কেবল নগদ চলছে ডাক বিভাগের অধীনে। বাকিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মোট ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। আগের মাস জুনের তুলনায় যা ৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম। অবশ্য আগের বছরের একই মাসের তুলনায় এমএফএসে লেনদেন বেড়েছে ১১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
গত জুলাইতে ক্যাশ ইন হয় ২৫ হাজার ৭৮০ কোটি এবং ক্যাশ আউট ২৬ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি লেনদেন ২৪ হাজার ৪৩৫ কোটি, ব্যবসায়িক পরিশোধ ২ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। সরকার থেকে ব্যক্তি ৮৬৯ কোটি, বেতন পরিশোধ ৩ হাজার ১৮৭ কোটি, টকটাইম কেনা ৮৭৯ কোটি এবং ১ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার ইউটিলিটি বিল পরিশোধ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালের পুরোটা সময়ে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ও লেনদেন বেড়েছে। ওই বছরের জানুয়ারিতে কার্ড ছিল দুই কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৫২৬টি। এসব কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। মার্চ শেষে কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয় দুই কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭। লেনদেনও বেড়ে হয় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর তিন মাস পর জুন শেষে ডেবিট কার্ডের ব্যবহার আরো বাড়ে। এ সময় কার্ড ছিল দুই কোটি ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭০২টি। এসব কার্ডে ২১ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সেপ্টেম্বর শেষে কার্ডের লেনদেন ও ব্যবহার আরো বেড়ে যায়। এ সময় কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই কোটি ৪২ লাখ ২৫ হাজার ১৬৪টিতে, লেনদেন হয় ২২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে কার্ড আরো বেড়ে দুই কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৯টিতে দাঁড়ায়। লেনদেন হয় ২৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।