পরিচয় বদলে একাধিক পাসপোর্ট তৈরির কারিগর উত্তরার ই-পাসপোর্ট পার্সোনাইলেজশন কমপ্লেক্স শাখার উপ-পরিচালক মাসুম হাসানকে গ্রেফতার করেছ তুরাগ থানা পুলিশ। আটক ব্যক্তি গোপালগঞ্জ কাশিয়ানি থানার শঙ্করপাশা গ্রামের এম এম হাসানের পুত্র।
জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বহুরূপ ধারণ করে ইচ্ছেমতো নিজের একাধিক পাসপোর্ট বানানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অধিদফতর থেকে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ার।
জানাগেছে, ঢাকার একটা অনলাইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গণমাধ্যমটির অনুসন্ধানে প্রকাশ, মাসুম হাসান ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এনওসি’র ভিত্তিতে প্রথম অফিসিয়াল পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যার নম্বর ওসি৪০০৬৪৪০। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট সরকারি চাকরির পরিবর্তে পেশা ‘আদার্স (অন্যান্য)’ উল্লেখ করে এনওসি’র ভিত্তিতে সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যার নম্বর বিএল০৭১২৩১৮। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর সাধারণ পাসপোর্টের পরিবর্তে পেশা সরকারি চাকরি উল্লেখ করে আবারও ‘জিও’র ভিত্তিতে একটি অফিসিয়াল পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যার নম্বর ওসি২২৬২৬১৫। এই পাসপোর্টটির মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় তিনি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ফরিদপুরে কর্মরত ছিলেন। এই পাসপোর্ট করার সময় মাসুম হাসান নিজের আবেদন নিজেই গ্রহণ করেন এবং নিজের পাসপোর্টে নিজেই সই করেন।
এরপর তিনি আগের অফিসিয়াল পাসপোর্টের মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ফরিদপুরের দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অফিসিয়াল পাসপোর্টের পরিবর্তে পেশা সরকারি চাকরির পরিবর্তে ‘পারমানেন্ট অফিসার বা স্টাফ অব অটোনমাস অরগানাইজেশন’ উল্লেখ করে আরেকটি সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। যার নম্বর ‘বিওয়াই০৭৫৩৩৯৫’। জানা যায়, এই পাসপোর্টটি গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি যে ‘এনওসি’ ব্যবহার করেছেন, সেটা ২০১৬ সালে ইস্যুকৃত। এই এনওসি যাচাই করে দেখা যায়, তিনি ওই এনওসি ইস্যুর তারিখ সংশোধন করে হাতে লিখে ২০১৬-কে ২০১৮ করেছেন— যা জাল-জালিয়াতির শামিল।
এছাড়াও, তার এই আবেদনটি প্রক্রিয়াকরণে পূর্ববর্তী পাসপোর্ট লোকাল সার্ভারে ‘ওসি২২৬২৬১৫’ উল্লেখ থাকলেও সেন্ট্রাল সার্ভারে এই নম্বরটি পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ, তিনি অ্যাপ্রুভাল মডিউলের ডিসিএম থেকে আগের অফিসিয়াল পাসপোর্ট নম্বর ওসি২২৬২৬১৫ পরিবর্তন করে তারও পূর্বের সাধারণ পাসপোর্ট নম্বর বিএল০৭১২৩১৮ ব্যবহার করেছেন, যা তথ্য বিকৃতি এবং তথ্য গোপনের শামিল।
তিনি সর্বশেষ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, চাঁদগাঁওয়ে দায়িত্বরত থেকে ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরি উল্লেখ করে এনওসি’র ভিত্তিতে নিজেই নিজের সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ ও অনুমোদন করে একটি সাধারণ ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যার নম্বর ‘এ০৪৫৯৭৯৩৩’। সরকারি কর্মচারীদের অফিসিয়াল পাসপোর্টের পরিবর্তে সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্বানুমতি গ্রহণের নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা অনুসরণ করেননি। বরং তিনি অসদুপায়ে একাধিক পাসপোর্ট নিয়েছেন।