দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতের অবস্থান তুলে ধরতে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে গত ২১ ও ২২ এপ্রিল চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৯। ৩৫ হাজারের বিশ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে দুইদিনের সম্মেলনে। মোট ১২টি অধিবেশনে বিপিও খাতের নানা দিকের ওপর আলোকপাত করেন ১৩০জন বক্তা। এদের মধ্যে ১৬ জন ছিলেন আন্তর্জাতিক বক্তা। সম্মেলনে বিপিও কার্যক্রমের নানা দিক উপস্থাপন করেন ৯টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- টেলকো সেবা ৯৯৯, ৩৩৩, হেলথ কেয়ার ইনফরমেশন সিস্টেম, ওয়ালটন, অগমেডিক্স বিডি, ডিজিকন টেকনোলজিস, ফিফোটেক, জেনেক্স ইনফোসিস এবং মাই আউটসোর্সিং লিমিটেড। সম্মেলন শেষে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও মূল্যয়ণ নিয়ে ডিজিবাংলার সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান শরীফ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন –ইমদাদুল হক।
ডিজি বাংলা: বাংলাদেশে বিপিও খাত এখন কোন অবস্থানে রয়েছে?
ওয়াহিদ শরীফ : বিপিও খাত এখন টেক অফ মুডে আছে।
ডিজি বাংলা: সম্মেলনে কেমন সাড়া পেয়েছেন?
ওয়াহিদ শরীফ: সরকার, বেসরকারি খাত এমনকি তরুণদের সতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে চাকরী প্রার্থীদের ভীড় ছিলো চোখে পড়ার মতো।
ডিজি বাংলা: প্রার্থীদের মধ্যে কি যোগ্য কর্মী পেয়েছেন?
ওয়াহিদ শরীফ: এক কথায় জবাব দিলো বলব- বিপিও খাতের জন্য আমাদের দেশে এখন দক্ষ জনবলের ব্যাপক অভাব রয়েছে। বিকাশমান এই খাতটিতে আমরা যোগ্য কর্মী পাচ্ছি না।
ডিজি বাংলা: কোন যোগ্যতার অভাব দেখছেন প্রার্থীদের মধ্যে
ওয়াহিদ শরীফ: শিক্ষাগত যোগ্যতা, অর্থাৎ সনদের দিক দিয়ে পিছিয়ে না থাকলেও অধিকাংশ প্রার্থীর মধ্যে নিজেকে উপস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। ভাষাগত চঞ্চলতার অভাব রয়েছে। কেবল ইংরেজি নয় অনেকে শুদ্ধভাবে বাংলাও লিখতে পারছেন না। দাপ্তরিক ভাষায় তারা পিছিয়ে রয়েছেন। মূলত প্রেজেন্টেশন, রিটেন ও স্পোকেনে দক্ষতা না থাকায় বিপিও খাতের জন্য ভালো ফলাফল করেও প্রার্থীরা পিছিয়ে রয়েছেন।
ডিজি বাংলা: এবারের সম্মেলনে আপনারা কী বার্তা দিলেন?
ওয়াহিদ শরীফ: এবারের সম্মেলনে মোটা দাগে আমরা ৩টি বার্তা দিয়েছি। সম্মেলনে আমরা স্থানীয় পর্যায়ে সেবার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি সেবাগুলো আউটসোসিং করার প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছি। এতে করে সরকারি সেবার মান বাড়বে। একইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
সম্মেলনে আমাদের দ্বিতীয় বার্তা ছিলো উৎপাদন কেন্দ্রিকতা থেকে শ্রম আইনটি সেবামুখী করা হোক। এই আইনটির পরিমার্জন করা না হলে কার্যত জ্ঞান ভিত্তিক শিল্পের সেবা খাতটি কোনো ভাবেই বেড়ে উঠতে পারবে না। কেননা শ্রম আইনে ইউনিয়ন করার প্রয়োজন থাকলেও সেবা খাতে এটির কোনো দরকার নেই। এটি সেবা খাতের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
আমাদের তৃতীয় বার্তাটি ছিলো- বিপিও খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল গঠন বা ঋণ সুবিধা চালু করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের ব্যবস্থা করা এবং যোগ্য কর্মী গড়ে তুলতে প্রযুক্তি জ্ঞানের বাইরেও বাস্তব জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু করা।
ডিজি বাংলা: এবারের সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত কোন সম্ভাবনাটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান?
ওয়াহিদ শরীফ: বিপিও খাতে বিশ্বে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার সামনে রেখে আমরা এই খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ এবারের সম্মেলনে তুলে ধরেছি। গত ১০ বছরে এই খাতে ৫০ হাজারের কমসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী ২ বছরে আরো ২০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নর্থ আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও জাপানে বিপিও খাতে যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তা বাংলাদেশ থেকেই মেটাতে সক্ষম হবো।
ডিজি বাংলা: কল সেন্টার ছাড়া বিপিও খাতে কী ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে?
ওয়াহিদ শরীফ: কল সেন্টার ছাড়াও বিপিও খাতে নন ভয়েস ব্যাক অফিস সেবার চাহিদা ব্যাপক। এর মধ্যেডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটা প্রসেসিং, এরর প্রসেসিং, অ্যাকাউন্টিং প্রসেস, ডেটা অ্যানালইসি ও এআই অন্যতম।
ডিজি বাংলা: এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা কি?
ওয়াহিদ শরীফ: দক্ষজনশক্তির অভাব এবং অর্থায়ন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অভিযাত্রায় প্রথাগত কর্ম শক্তি থেকে প্রযুক্তি নির্ভর ও তথ্যবিশ্লেষণ জ্ঞানের অভাব এখনো প্রকট। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলয় তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা সম্মেলনে সেমিনার ও সভা করেছি। আশা করছি, এবার আমরা উত্তরণের পথে হাঁটা শুরু করেছি।