দেশের গেমারদের কাছে পরিচিত ব্র্যান্ড হিসেবে গিগাবাইট ব্র্যান্ড এর লাগেজ ও রিফার্বিশ পণ্যে সয়লাব দেশের প্রযুক্তি বাজার। তাইওয়ানের এই বিশ্ব নন্দিত ব্র্যান্ড পণ্যের মাদারবোর্ড, গ্রাফিক্স কার্ড, ল্যাপটপ ও মনিটর এখন দেশে প্রবেশ করছে চায়না, দুবাই, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালোয়েশিয়া থেকে। দেশে একক জনপ্রিয়তা অর্জনের সুযোগ নিয়ে অবৈধ পথে দেশে আমদানি করা হচ্ছে এই ব্র্যান্ডের মাদারবোর্ড ও গ্রাফিক্স কার্ড। কতিপয় ব্যবসায়ী তা রাজধানীর সুপরিচিত কম্পিউটারের ৩টি পাইকেরি বাজার থেকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের প্রতন্ত অঞ্চলে। কেউ কেউ অনলাইনে এনেও এসব পণ্য নিয়ে প্রতারণা করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, অবৈধ পথে আসা এসব পণ্য থেকে বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বছরে কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে এই পণ্যগুলোর দাম পরিশোধেও ডলারের মার্কেটে অস্থিরতা বাড়াছে বলেও মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। আর এসব পণ্য কিনে যখন সার্ভিস নিতে যাচ্ছেন তখন এর একমাত্র পরিবেশক স্মার্ট টেকনোলজিস পড়ছে চরম বিপাকে। কেননা, এই পণ্যগুলো তাদের আমদানিকৃত নয়।
এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এ নিয়ে খুচরা ব্যবসায় পর্যায়ে এবং গ্রাহদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কাজ চলঝে বলে জানিয়েছেন গিগাবাইট বাংলাদেশের কন্ট্রি হেড আনাস খান। একটি দুষ্টু চক্র গ্রাহকদের ‘বিভ্রান্ত’ করে এবং ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের প্রলোভন দেখিয়ে প্রকারান্তরে তাদেরকেই ফতুর করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন আনাস খান।
জানাগেছে এ ধরনের মাদারবোর্ড ও গ্রাফিক্স কার্ড কিনে প্রতারণার শিকার হওয়া গ্রাহকের সংখ্যা ৯০ শতাংশ। দেশের একমাত্র পরিবেশক হওয়ায় এসব পণ্য যখন নষ্ট হয়ে যখন বিক্রয়োত্তর সেবার দায় না থাকায় গ্রাহকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হচ্ছে পরিবেশক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস। বিষয়টি আমলে নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজেদের পরিবেশিত পণ্যে হলোগ্রাম যুক্ত স্টিকার ব্যবস্থা চালু করার পর এবার কিউআর কোড ব্যবহার করতে সংস্থাটিকে অনুরোধ করেছে গিগাবাইট বাংলাদেশ প্রধান।
বাজারে সয়লাব নন-চ্যানেল গিগাবাইট পন্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্মার্ট এর পরিচালক জাফর আহমেদ। তিনি বলেন, “কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ পথে ওয়্যারেন্টি বিহীন গিগাবাইট পন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করছেন। যার ফলে, শুধুমাত্র গিগাবাইট এবং পরিবেশক হিসেবে শুধুমাত্র আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি না, মূল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ইউজারগন। তাই, আমি ইউজার এবং ক্রেতাগনকে অনুরোধ করব, আপনারা গিগাবাইট এর যেকোন পন্য কেনার পূর্বে অবশ্যই স্মার্ট ওয়্যারেন্টি স্টিকার দেখে ক্রয় করবেন। প্রয়োজনে কোন ধরনের কনফিউশন থাকলে, সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে জেনুইন চ্যানেলের পন্য কিনা তা যাচাই করে নিন।“
এ বিষয়ে স্মার্ট টেকনলোজিস এর মার্কেটিং ডিরেক্টর মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বলেন, গিগাবাইট এর সাথে স্মার্ট এর পথচলা প্রায় ১৮ বছরের। এসময়ে, গিগাবাইটের গুনগত মানের পন্য আর স্মার্ট এর সার্ভিস একসাথ হয়ে দেশের আইটি পেরিফেরাল মার্কেটে একটা বড় মার্কেট শেয়ার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যারা এই সক্ষমতাকে বিনষ্ট করছে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই তাদের সংশোধন হওয়া উচিত। আর এ ধরনের পণ্য যারা কিনছেন সেইসব গ্রাহক কেবল নিজেরাই ঠকছেন না; সরকারের বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিতেও সাহায্য করছেন। জাতীয় স্বার্থেই আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবো।
প্রসঙ্গত, দেশের মাদারবোর্ড এবং গ্রাফিক্স কার্ডের সিংহভাগ বাজারই গিগাবাইট এর দখলে।