কৌশলে মোট ৩৫৮ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার (মানি লন্ডারিং) হয়েছে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই–অরেঞ্জ ডট শপের মাধ্যমে। বেশি কমিশন পাওয়ার আশায় এসএসএলের পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার শপ লিমিটেড (এসএসএল) এক্ষেত্রে ক্রীড়ানকের ভূমিকা পালন করেছে। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী জিল্লুর রহমান মোস্তফা।
অভিযোগ আছে, ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় ২৯৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৬০৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অর্থাৎ ৯০০ কোটি ২১ লাখ টাকা স্থানান্তর করেছে ই–অরেঞ্জ। বাকি ৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার মধ্যে আদালতের নির্দেশে জব্দ আছে ৩৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং ২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা কমিশন নিয়েছে এসএসএল।
এ কারণে এসএসএল চেয়ারম্যান সাবরিনা ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম এবং এসএসএলের চিফ এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার নূরুল হুদা ই–অরেঞ্জের মানি লন্ডারিংয়ে সহায়তায় অভিযুক্ত হয়েছেন।
আর প্রধান অসামী হিসেবে মমলার তদন্তে ব্যবসায় পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট গুলশান থানার বহিস্কৃত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা, তার বোন সোনিয়া মেহজাবিন, সোনিয়ার স্বামী মাসুকুর রহমান, সোহেল-সোনিয়ার খালু রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ, ভাই ও প্রতিষ্ঠানের দুই সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) নাজমুল আলম রাসেল এবং মঞ্জুর আলম পারভেজের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন সদ্য বদলি হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এদের মধ্যে রাসেল ই–অরেঞ্জের সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করতেন। আত্মসাৎ প্রক্রিয়ায় জড়িত শেখ সোহেল রানা ভারতে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে হাতজবাস করে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। তবে সোনিয়া মেহজাবিন ও তাঁর স্বামী মো. মাসুকুর রহমান বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।
এরা ছাড়াও আরো তিনজন এই মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরা হলেন- ই–অরেঞ্জের নতুন মালিক বীথি আক্তার, শেষ দিকে যোগ দেওয়া ই–অরেঞ্জের সিওও আমানউল্লাহ চৌধুরী এবং অল জোন নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মেহেদী হাসান।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিন বছর ব্যবসা করেছে ই–অরেঞ্জ। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ‘ডাবল টাকা ভাউচার অফার’ দিয়ে তারা অস্বাভাবিক কম দামে মোটরসাইকেল, মুঠোফোন, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন ইত্যাদি পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। এভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ই–অরেঞ্জ। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৭০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে সমপরিমাণ লেনদেনের মাধ্যমে ৯৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। অগ্রিম টাকা দিয়েও অনেকে পণ্য পাননি। আর এসব লেনদেনের অর্থই মানি লন্ডারিং হয়েছে।