জীশান কিংশুক হক সিন্দাবাদ ডট কম-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে নিজস্ব থিংক ট্যাংক ও কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়ে ব্যস্ত। ই-কমার্স নীতিমালা হালনাগাদ করার জন্যে তিনি কাজ করেছেন, স্টার্ট-আপ ইন্ডাস্ট্রিতে পলিসি এবং মেন্টরশিপ নিয়ে বিভিন্ন অবদান রেখে চলেছেন। জুলাইয়ের অভ্যুথান-পরবর্তী-সময়ে স্টার্টআপ এবং ই-কমার্সে কী কী সংস্কারের প্রয়োজন, একান্ত সাক্ষাতকারে সেসব বিষয় জানিয়েছেন ডিজিবাংলাটেক.নিউজ নির্বাহী সম্পাদক ইমদাদুল হক-কে।
ডিবাটেক: সম্প্রতি পাঠাও প্রায় ১৪৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেল। জুলাইয়ের অভ্যুথানের পর বাংলাদেশের জন্য এইটা একটা আশাজাগানিয়া খবর। এর মানে কি বিদেশীরা এখন বাংলাদেশী স্টার্টআপে বিনিয়োগ করা শুরু করবে?
জীকিহক: পাঠাওকে আপনার মাধ্যমে আবারও অভিনন্দন। শুধু পাঠাও না, এই বছরেই আরও বেশ কিছু স্টার্টআপ বিনিয়োগ পেয়েছে, যেমন প্রিয়শপ, সিকুয়া, চালডাল, সক্রিয়, টাইগার নিউ এনার্জি, ইত্যাদি। গত ২০২৩-এও কিন্তু ৪৫টা ডিলে প্রায় ৭৩ মিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ বিনিয়োগ হয়েছে বলে লাইটক্যাসেল পার্টনার জানিয়েছে। সুতরাং, বাংলাদেশে বিনিয়োগ আবার নতুন করে শুরু করার কিছু নেই। হ্যাঁ, প্রফেসর ইউনুসের মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে প্রিয় মানুষের হাত ধরে রিফর্ম হচ্ছে, ব্যবসা এবং অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আসছে, এগুলো বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের জন্য বড় সহায়ক। তবে, বিনিয়োগ আসছিল, আসতে থাকবে।
ডিবাটেক: আপনি বলছেন, বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। কিন্তু আসলেই কি বর্তমান অস্থায়ী অবস্থায় বিনিয়োগ আসবে?
জীকিহক: প্রথমত, আমি বরং আপনাকে ছোট একটা প্রশ্ন করি – আমাদের কি বাইরের দেশ থেকে বিনিয়োগ খুব বেশী প্রয়োজন? আমাদের দেশের যেসব সুবিশাল শিল্প গ্রুপ আছেন, তাঁরা কীভাবে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেন? ২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করে একটা ছোট বা মাঝারি ফ্যাক্টরি দিতে যাঁদের দ্বিধাবোধ নেই, তাঁরা একেকজন ইকমার্স বা স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তার উপর বাজী কেন রাখতে পারবেন না? সুতরাং, আমাদের দেশের ভেতরই প্রচুর বিনিয়োগ সামর্থ্য আছে। ইচ্ছে এবং অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। ইকোসিস্টেমটাতে সবাইকে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের ফান্ড নেই, সেটা ঠিক না; বাংলাদেশে এই অবস্থায় বিনিয়োগে আগ্রহী ফান্ড নেই, সেটাও না। ফান্ড হয়তো বাংলাদেশে আসছে না। বেশিরভাগ ভেঞ্চার ফান্ডের বাংলাদেশে বিনিয়োগের ম্যান্ডেট (অনুমতি) নেই – সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করা যেতে পারে। করলে, যে ভেঞ্চার বিনিয়োগের ধারা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেটা আরও প্রসারিত হবে, বিনিয়োগ আরও বড় কলেবরে আসবে!
ডিবাটেক: দেশের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ স্বপ্ন দেখে, তাঁরা স্টার্ট-আপ বানাবে, নিজের ব্যবসা দাঁড় করাবে। আমাদের তাহলে ইকোসিস্টেমে কী কী রিফর্ম করা দরকার তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য?
জীকিহক: আমি আসলে ঢালাওভাবে কেবল ই-কমার্স বা স্টার্ট আপ দিয়ে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হবে, সেটা বিশ্বাস করি না। স্টার্ট আপ-এর কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে, সব প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবসায়ী কিন্তু স্টার্ট-আপ না। আমাদের তরুণরা যেন যেকোন ধরণের উদ্যোগে এগোনোর সমর্থন ও সাহস পায়, সেটা প্রযুক্তি-ভিত্তিক হোক বা না হোক, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে তরণ উদ্যোক্তাদের বিকাশের জন্য আমাদের পলিসিতে কিছু পরিবর্তন এবং পরিমার্জন আনতেই হবে। আমাদের স্টার্ট-আপ পলিসি তৈরি হয়েছিল একটা নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে, আই.সি.টি মন্ত্রণালয় থেকে। এর বাইরে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আছে, বাণিজ্য অধিদপ্তর আছে, আছে কৃষি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আরও অনেকে। এদের সবাইকে নিয়ে একটা ক্রস-ফাংশনাল নীতিমালা এবং কর্মপন্থা নিতে হবে; প্রত্যেক অধিদপ্তরকে, প্রয়োজন হলে তার অধীনের প্রয়োজনীয় অণুবিভাগকে, ক্ষমতায়ন করতে হবে যেন তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির যাত্রা ত্বরাণ্বিত হয়। আমলা কিংবা একাডেমিশিয়ানরা, তরুণদের অভিনবত্ব কিংবা প্রযুক্তি-ব্যবসা পুরোপুরি বুঝবেন, এইটা আশা করা ঠিক না – সুতরাং ইন্ডাস্ট্রি থেকে অভিজ্ঞ মানুষ এনে বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পৃক্ত করতে হবে।
তবে সবকিছুর আগে প্রয়োজন একটা সামষ্টিক রূপরেখা বা রোডম্যাপ প্রণয়ন। এইটা হচ্ছে স্টেপ জিরো! সেটা করার জন্য ছোট একটা টাস্কফোর্স বা কমিশন তৈরি করে দিলে বিষয়টা দ্রুত, প্রাসঙ্গিক এবং বাস্তবমুখী হতে পারে।
ডিবাটেক: আপনি সিন্দাবাদ তৈরির আগে ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকে। বিকাশের প্রাথমিক দিনগুলোতে সাথে ছিলেন ব্যাংক থেকে। আপনার মতে, ব্যাংকগুলো কেন স্টার্ট আপ ফাইন্যান্স করে না?
জীকিহক: ব্যাংকগুলো যত স্বচ্ছন্দে একটা ট্র্যাডিশনাল ব্যবসায় ১০০ কোটি টাকার ঋণ দিতে পারে, একটা স্টার্ট-আপে তারা ১ কোটি টাকাও এতো সহজে দেয় না। ফিনান্সিয়াল সেক্টরে আমরা অভিনবত্ব নিয়ে কাজ করি কম। আমরা যা আগে হয়ে এসেছে, যতটুকু বুঝি, তার বাইরে প্রকল্পে অর্থায়ন করি না। ফলে, ব্যাংকাররা আসলে তরুণ উদ্যোক্তাদের স্টার্ট-আপগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাননি। বেশীরভাগ ব্যাংকই গতানুগতিক ইনভেন্টরি, কিংবা ক্যাশ ফ্লো অথবা ক্যাপিটাল মেশিনারি নিয়ে অর্থায়নে অভ্যস্ত। তারা জমিজমা বা স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ দিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেও নতুন ব্যাংকিং প্রডাক্টের জন্য চাপ দেয়নি, ব্যাংকগুলো নিজেরা ইকুইটি ফাইন্যান্স বা অন্যান্য বিভিন্ন উপায়ে ফাইনান্যন্সিং নিয়ে দ্বিধাণ্বিত থেকেছে।
অন্য দশটা ফ্যাক্টরি বা ট্রেড ফাইনান্সের সাথে স্টার্ট-আপের বড় তফাৎ হচ্ছে যে, এটা মেধা-ভিত্তিক, প্রযুক্তি-নির্ভর একটি ব্যবসা, যেটি প্রায় শূন্য স্থাবর বিনিয়োগে হাজার শতাংশ রিটার্ণ দেবার সম্ভাবনা রাখে। এই সেক্টরটা বোঝার জন্য, এখানে বিনিয়োগের সদিচ্ছা থাকলে, ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলে ইন্ডাস্ট্রি থেকে লোক নিয়ে, একটা টাস্কফোর্স গঠন করে প্রডাক্ট ও বিনিয়োগের রূপরেখা তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন কিছুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগলে, সেটা কোন বড় বাধা হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
ডিবাটেক: আর দেশের অন্যান্য শিল্পপতিরা? তাদেরকে কীভাবে স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমে আনা যায়?
জীকিহক: একটা সহজ উপায় হতে পারে ছোট বা মাঝারী একটা ফান্ড তৈরি করা। বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ এই ফান্ডে ছোট-বড় বিনিয়োগ করতে পারেন … ৫ কোটি, ১০ কোটি, ইত্যাদি। ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া যায় স্টার্ট-আপ ইন্ডাস্ট্রি বা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে আসা কাউকে, বা ভেঞ্চার ম্যানেজার কোম্পানিকে। এই মডেলটা আই.ডি.এল.সি গত কয়েক বছর আগেই করেছে, তবে সেটাকে সম্প্রসারিত করেছে কতোটুকু, জানি না। কেন করেনি, সেটা নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে, ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোনো যেতে পারে। এই ধরণের ফান্ডের কারণে ঝুঁকি কমে আসে, আবার শিল্পগ্রুপগুলো বিভিন্ন স্টার্ট-আপ কীভাবে কাজ করছে, সেটা পরিচালনা পরিষদে থেকে দেখতে পারেন, এতে তাঁদের আত্মবিশ্বাস এবং আগ্রহ বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সরকারের এক্ষেত্রে কিছু দায়িত্ব আছে। প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসাকে আমলাতান্ত্রিক ক্রয়নীতিমালার প্যাঁচে ফেলে, ঠিকই বছরের পর বছর নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিকে অস্বাভাবিক মূল্যে কাজ দেয়া হয়েছে, গাড়ীচড়া নারী উদ্যোক্তাকে ওয়েবসাইট বানানোর নামে টাকা দেয়া হয়েছে, অথচ সত্যিকার বুয়েট বা কুয়েট বা জগন্নাথ থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েগুলো কাজ পায়নি, পায়নি বিদেশী ক্লায়েন্টদের কাছে প্রতিষ্ঠিত অসাধারণ মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তারা। সুতরাং, ক্রয়নীতি এবং বিশেষ করে প্রযুক্তি-নির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নকে কীভাবে আরও তরুণ উদ্যোক্তামুখি করা যায়, সেটা দেখতে হবে। এরা ব্যবসা পেলে, বেসরকারি খাত আরও উৎসাহিত হবে তাদের পেছনে বিনিয়োগে।
আরেকটা দায়িত্ব হবে আর্লি স্টেজ ইনভেস্টমেন্টে এগিয়ে আসা, এবং সেইসাথে বিনিয়োগ উসুল করে নেয়ার পথটা সহজ করা। ‘স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ’ সরকারের একটা ভাল উদ্যোগ ছিল, এইটাকে সংস্কার করে বিনিয়োগে নিয়ে আসতে হবে। আর, যেকোন বিনিয়োগকারী ‘এক্সিট’ চাইলে, তিনি যেন সহজেই বিনিয়োগের উৎস অনুযায়ী দেশে বা বিদেশে তাঁর বিনিয়োগ ফেরত নিতে পারেন, সেটার নীতিমালা সংশোধন করে দিতে হবে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা তখন একটা ভরসা পাবেন, তাঁরা আকৃষ্ট হবেন নতুন উদ্যোগের সমর্থনে এগোতে।
ডিবাটেক: কিন্তু উদ্যোক্তাদের নিয়ে কী হবে? স্টার্টআপে দাঁড়াতে পারছি না কেন?
জীকিহক: (খানিকটা হেসে) কেন দাঁড়াতে পারছি না, এইটা নিয়ে কথা বলার জন্য প্রচুর মানুষ পাবেন। বরং, এই তরুণগুলোর স্বপ্ন কীভাবে সত্যি করা যায়, অর্থাৎ স্টার্টআপ কিংবা যেকোন প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্যোক্তাদের কীভাবে সফল করা যায়, সেটা নিয়ে কথা বলি।
প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে, আমরা অপার সম্ভাবনার একটা দেশ। পপুলেশন ডিভিডেন্ড বলুন, টেক- এডাপ্টিভনেস বলুন, নানা রকম না-থাকার কথা বলুন – সবকিছু মিলিয়ে আমাদের দেশের নিজেদেরই প্রচুর সম্ভাবনা আর সমাধানের জায়গা খোঁজা বাকী। গরুর মুখের নাসারন্ধ্র একটা ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো – একটার সাথে একটা মিলে না; তাহলে আমরা যদি এইটার একটা বিগ ডাটা নিয়ে কাজ করতে পারি, কল্পনা করতে পারেন এটা খামারিদের জন্য কত বড় সুবিধা নিয়ে আসবে? গ্রামীণ ব্যাংক যে মোবাইল ফোনে বিনিয়োগ করলো, সেটাই ধরুন না – বিদেশ থেকে ঠিকমতো ফোনে কথা বলা যায় না, সুতরাং ফোন সুবিধাকে সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় আনার প্রচেষ্টায় বিনিয়োগ এলো। এমন হাজারো অভিনব সমস্যার সঠিক সমাধান নিয়ে যদি তরুণ উদ্যোক্তারা এগোতে পারেন, তাহলে বিনিয়োগ কোন বিষয় নয়।
দ্বিতীয়ত, আইডিয়া আর এক্সিকিউশন এক নয়। আমরা সম্ভাবনার কথা বলি, পরিকল্পনা করি, কী কী করা উচিৎ সেটা নিয়ে বিশাল বক্তৃতা দিয়ে ফেলি, অথচ সেটা বাস্তবায়ন – এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন – আর করে উঠিনা। যে কোন বিনিয়োগকারী আসলে অগ্রগতি দেখতে চান। বিক্রি না বাড়ুক, অন্তত প্রডাক্টটা তৈরি হল কিনা, মার্কেটে প্লেস করা হয়েছে কিনা, এসব দেখতে চান।
তৃতীয়ত, আমরা নিজেদের গুছিয়ে ঠিকমতো পরিবেশন করতে পারি না। আমরা ইংরেজিতে দুর্বল, তাহলে ইংরেজিতে সবল কাউকে নিয়ে বিনিয়োগকারীর সামনে যেতে পারি। বিনিয়োগকারীর সামনে পিচ করা তো দূরের কথা – আমাদের প্রায় কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ঠিকমতো প্রেজেন্টেশন শেখানো হয় না। প্রেজেন্টেশনের প্রথম ৩০ সেকেন্ডের ভেতর যদি বিনিয়োগকারীকে আটকে না ফেলতে পারি, তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন, বিনিয়োগ পাবো না।
ডিবাটেক: তাহলে সমাধান?
জীকিহক: উদ্যোক্তাদের বলবো, পছন্দের কাউকে মেন্টর হিসেবে নিন। নিজেকে প্রস্তুত করার কোর্স করুন, নিজেকে নিয়ে প্র্যাকটিস করুন। আর ফেসবুক লিংকডিনে লেখালেখির চেয়ে বরং নিজের প্রডাক্ট এবং মার্কেট প্রতিষ্ঠায় সবটুকু মনোযোগ দিন।
ডিবাটেক: আপনি সিন্দাবাদে এখন নেই। তাহলে কী নিয়ে ব্যস্ত?
জীকিহক: আমি আজও ফোন পাই সিন্দাবাদ মনে করে। কিন্তু আমি সিন্দাবাদ থেকে ২০২১-এর অক্টোবরে এক্সিট নিয়েছি। অনন্ত গ্রুপ, আবিষ্কার এবং ব্রামারের মত অসাধারণ বিনিয়োগকারীরা না থাকলে এই স্টার্ট আপে এতো বড় হতো না – আমি তাঁদের কাছে অসম্ভব কৃতজ্ঞ। বর্তমানে সামনে আছি আমার কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান, আর টি এস এন্টারপ্রাইজ, নিয়ে। এখান থেকে আমি ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানোর, ই-কমার্সের গ্রোথ এবং কিছু নেতৃস্থানীয়দের কোচিং দিয়ে থাকি। আর নেপথ্যে একটা নতুন স্টার্ট আপ নিয়ে কাজ করছি, একেবারেই নিঃশব্দে, সেটা সময় হলে আত্মপ্রকাশ করবে।
শখের বসে ড্যাফোডিলে ভিজিটিং প্রফেসর, মাঝে মধ্যে কিছু পলিসি-সংক্রান্ত কিংবা ইন্ডাস্ট্রিকে কিছু দেবে এমন প্যানেল বা অনুষ্ঠানের মডারেশন করি। আর ইন্ডাস্ট্রির কিছু তরুণ উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানে অ্যাডভাইজর কিংবা তাঁদের মেন্টর হিসেবে সময় দিই।
ডিবাটেক: ই-ক্যাব বা কোন সমিতির হয়ে নেতৃত্বে আসবেন বলে শোনা যাচ্ছে?
জীকিহক: ই-ক্যাব নির্বাচনে আমি একেবারেই আগ্রহী নই। এই সংগঠনটিতে ব্যাপক সংস্কার দরকার – গঠনতন্ত্র থেকে শুরু করে সদস্য তালিকা পর্যন্ত সবকিছুতে আমূল সংস্কার দরকার। ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনে, সংস্কারে আছি, যেকোন কাজে আছি – কিন্তু এর বেশী কিছু না।
ডিবাটেক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে কী আশা করেন?
জীকিহক: দেখুন, নতুন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোগগুলোই আসলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরির বড় ক্ষেত্র। তরুণরা দেশের জনসংখ্যার সবচে’ বড় অংশ, এবং সেখানে নারীরা আরও বেশী। এদেরকে উদ্যোক্তা তৈরিতে সামনে না নিয়ে আসলে আমরা আসলে যেখানে আছি, সেখানেই দাঁড়িয়েই থাকবো। আমার বিশ্বাস, আমরা সকলে আমাদের মেধা, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং নেটওয়ার্ক দিয়ে এই সরকারকে সাহায্য করবো সংস্কার করে, যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, সেটা গড়তে। তাঁদের সদিচ্ছা এবং সামর্থ্য আছেই, আমরা শুধু যেন পাশে দাঁড়াই।
এই দেশটাকে গড়ে তোলার যে সুযোগ আমরা পেলাম, সেটা কয়েক প্রজন্মে একবারই আসে – এই সুযোগ কোনভাবেই হারাবো না!
প্রশ্ন: আপনি বলছেন, দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছেন? এই সুযোগ কীভাবে রক্ষা করতে চান?
জীকিহক: প্রফেসর ইউনুস আমাদের বলেছেন যে রিফর্ম আমাদেরকে নিজ নিজ জায়গা থেকে শুরু করতে হবে, কেউ করে দেবে না। আমি আমার মেধা, নেটওয়ার্ক, এবং অভিজ্ঞতার আলোকে সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি। সম্প্রতি ই-ক্যাব এবং তথ্যপ্রযুক্তির ফাউন্ডাররা কয়েকজন মিলে সুবিশাল ত্রাণ কার্যক্রম চালায়: এতে ২৩ হাজারের বেশী মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে, সেটার পেছনে আমরা কয়েকজন ছিলাম। বাংলাদেশের জন্য বিদেশের কাছে সোশ্যাল মিডিয়াতে গল্পটা কী বলা উচিৎ, সেটাতে ইনফ্লুয়েন্সারদের ভূমিকা কী হবে, এটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের পলিসি রিফর্ম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। ই-ক্যাব শুধু নয়, ইকমার্স ও স্টার্টআপ খাতের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে একটা রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করছি।
ডিবাটেক: নতুন বাংলাদেশ ২.০- তে এই দুই খাতের টেকসই উন্নয়নে এখন অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত?
জীকিহক: তথ্য প্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে (১) পলিসিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন যেন প্রযুক্তির সুবিধাগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছায়, যেমন গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের বলয় থেকে বেরিয়ে ইন্টারনেট আরও সুলভ হয়, যেন কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনার মতো ইকোসিস্টেম তৈরি হয়, বা গ্রামে বসেও তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে, (২) বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারী বিভাগের সমন্বয়ে সবধরণের নগদ লেনদেনকে ডিজিটালের দিকে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, এবং (৩) লাইসেন্সিং ও প্রাতিষ্ঠানিক রিফর্ম আনা দরকার যেন ভবিষ্যতে দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ না থাকে।
স্টার্টআপের জন্য প্রয়োজন, (১) তরুণদের ব্যবসায় আসার প্রক্রিয়া এবং পরিবেশ সহজ করা, (২) অর্থায়নের একটা সেতু-বন্ধন তৈরি করা, আর (৩) স্টার্টআপ বাংলাদেশসহ এই ধরণের সরকার সমর্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করে সেগুলোকে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির সত্যিকার প্রভাবক হিসেবে কাজে লাগানো।
ডিবাটেক: দীর্ঘক্ষণ ধরে বেশ খোশ মেজাজে উত্তর দেয়ায় আপনাকে আমাদের পাঠকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ
জীকিহক: আপনাকে এবং ডিজিবাংলাটেক.নিউজ পরিবার ও পাঠকদের ধন্যবাদ, ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য।