বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘সাইবার সুরক্ষা’ আইন নামে একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। কম্পিউটার সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ প্রনয়ণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। । নতুন আইনে কম্পিউটার ও হ্যাকিং–সম্পর্কিত অপরাধের বর্ণনা থাকবে। নইলে তথ্য ও প্রযুক্তির নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। এর সঙ্গে মানুষের কথা বলার অধিকারের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কার্যক্রম তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে এই আইনের অধীন দায়ের হওয়া স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত মামলাগুলো (মুক্তমত প্রকাশের কারণে মামলা) একসঙ্গে রহিত (বাদ) বা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। এ বিষয়ে আইনেই একটি বিধান রাখা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই আইন প্রত্যাহারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে আমরা সহায়তা করেছি। তবে হ্যাকিং বা কম্পিউটার অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলো চলমান থাকবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন অধ্যাদেশ হচ্ছে, সেখানে কোনও রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন,‘একটা-দু’টো দিন অপেক্ষা করেন। আর সংশোধনীটাতো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের প্রস্তাবনায় যেটা আছে সেখানে আদালতকে সরাসরি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। তবে আদালত যদি মনে করেন, তাহলে তারা এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কনসার্ন অথরিটির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত তদন্ত কমিশন গঠনে আইন ও বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। উক্ত কমিশনকেও আইন মন্ত্রণালয় সাচিবিক সহায়তাও প্রদান করে যাচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। উক্ত সংস্কার কমিশন গত ১২ নভেম্বর আমার সঙ্গে বৈঠক করেছে। আশা করছি, কমিশন বিচার বিভাগের জন্য একটি পূর্ণাংগ সংস্কার প্রস্তাব দ্রুতই প্রস্তুত করবে।’
‘প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করছেন, সেখানে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু চেষ্টার ঘাটতি নেই উল্লেখ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন গঠনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং উক্ত সংস্কার কমিশনগুলোকে সব ধরনের সাচিবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।’
সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সরকার ভালো একটা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে অনেক উপদেষ্টা আগের পেশায় ফিরে যেতে চায়।’
প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দেশে কোনও আসামিকে না পেলে রেড এলার্ট জারির আবেদন করতেই পারি। বাংলাদেশ ইন্টাপোলের সদস্য।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা নেতা কর্মীদের ফেলে রেখে নিজে পালিয়েছেন। নিজে পালানোর তিনদিন আগে তার স্বজনদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তাকে প্রশ্ন করা উচিত, তাদের ফেলে রেখে কেন পালিয়েছেন তিনি?’
আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সরকার আওয়ামী লীগের মতো দমন-পীড়ন চায় না। অযৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে নানা দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকার বিষয়গুলো দেখছে। কঠোর হলে সরকার ভালোভাবেই কঠোর হবে।
প্রসঙ্গত, সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলায় ডিজিটাল মাধ্যমে ‘স্পিচ অফেন্স’ এবং কম্পিউটার হ্যাকিং বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতিকে ‘কম্পিউটার অফেন্স’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত মামলাগুলোর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের অধীন ২৭৯টি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন ৭৮৬টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীন ২৭৫টি মামলা চলমান।