গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থীদের বনভোজনের দ্বিতল বাসে বিদ্যুতায়িত হওয়ার ঘটনায় তিনটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) আইইউটি, বুয়েট ও পল্লী বিদ্যুতের তদন্ত দলের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী এলাকায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত তদন্ত দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করে। এ সময় আইইউটির অধ্যাপক রাকিব হাসান, বুয়েটের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান ও ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২-এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আকমল হোসেন তদন্ত দলগুলোর নেতৃত্ব দেন। তবে উপস্থিত সাংবাদিকদের তারা তদন্তের আগে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি।
এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খানের কাছে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মাত্র দেখতে এলাম। ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পেয়েছি ভুলটা কোথায় ছিল। মাটির মায়া রিসোর্টের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মাসুদ ইউসুফসহ স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত শেষ হওয়ার পর মন্তব্য করতে পারব।
বুয়েটের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমরা কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসেছি। সরেজমিন গ্রামের সরু সড়কে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ঘুরে দেখেছি। এতে যেটি মনে হলোÑ গত কয়েক বছরে মাটির মায়া রিসোর্টের সড়কটি কমপক্ষে ৩ ফুট উঁচু হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সঞ্চালন লাইনটি নিচু হয়ে গেছে। তাই দ্বিতল বাসটি চলার সময় এর ছাদ ওই বিদ্যুৎ লাইনের সঙ্গে লেগে যায়।
তিনি আরও বলেন, একটি বিষয় লক্ষ করেছি যে, বিদ্যুতের লাইন অনেক স্থানে ঝুলে রয়েছে। আর যে স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে লাইনের তার অনেকটাই ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা গেছে। গ্রামের এই সরু সড়ক দিয়ে কীভাবে দোতলা বাসে এতগুলো শিক্ষার্থীকে নেওয়া হচ্ছিল- এটিও একটি প্রশ্ন। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উচ্চতা ১৬ ফুট হয়ে থাকলে সড়ক ৩ ফুট উঁচু হয়েছে। ফলে কেবল নিচু হয়েছে। বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হবে। একটি কথা পরিষ্কারÑ তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআরটিসি বাস কর্তৃপক্ষ এবং রিসোর্ট কর্তৃপক্ষসহ সবার দায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহমেদ জানান, ঘটনার দিন ডাবল ডেকারের তিনটা বাস একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় সামনে থেকে একটি অটোরিকশা আসছিল। তিনটি বাসের পেছনেরটির শিক্ষার্থী অথবা হেলপার হাতে লাঠি নিয়ে অটোরিকশার দিকে এগিয়ে যায়। তখন আমার সন্দেহ হয় ঝামেলা হয়েছে কি না। পরে সামনের দিকে এগিয়ে দেখি সে অটোরিকশার চালকের সঙ্গে কথা বলছে। একপর্যায়ে তর্কে জড়িয়ে উঁচুস্বরে বাগ্বিতণ্ডাও হয়। তখন পেছনের বাসের চালক হয়তো মনে করেছে অটোকে সাইড দিতে হবে, জায়গা সরু। পরে চালক বাসটি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে বাসের পেছনের অংশ তারের সঙ্গে লেগে স্পার্ক শুরু হয়।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা ঘটনার পরদিন গত রবিবার দুর্ঘটনাস্থলে বিপজ্জনক এরিয়া হিসেবে লাল নিশান টাঙিয়ে দেয়। ৭টি লাঠিতে তারা সড়কের পাশে লাল কাপড়ের বড় বড় নিশান টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
গত শনিবার সকালে আইইউটি ৪৬০ শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের নিয়ে ৬টি বিআরটিসির দ্বিতল বাস এবং ৩টি মাইক্রোবাসে শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী এলাকার মাটির মায়া রিসোর্টে বনভোজনে আসে। এ সময় ওই এলাকায় তাদের একটি বাস সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ১১ হাজার ভোল্টের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- ফেনীর মাস্টারপাড়া এলাকার মোতাহার হোসেনের ছেলে মীর মোজাম্মেল (২৩), রাজশাহীর রাজপাড়া ডিঙ্গাবো এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জোবায়ের আলম (২২) এবং রংপুর সদরের ইমতিয়াজুর রহমানের ছেলে মুবতাছিন রহমান (২২)। তারা প্রত্যেকেই মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।