চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)- এর ইইই বিভাগের ‘০৯ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী তানজিল জাহান ইসলাম (তামিম)-এর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন চুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল।
তার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। চুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকাহত পরিবার, সহকর্মী, সহপাঠীদের প্রতি চুয়েট পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে শুক্রবার।
এদিকে, নির্মিত অ্যাপার্টমেন্টে ফ্ল্যাট পাওয়া নিয়ে ডেভলপার কোম্পানির সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি এক বছর (২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) আগেই তামিম তার ভার্সিটি (চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) গ্রুপে (CUET ADDA BAAZ) এক পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরে সাহায্য চেয়েছিলেন।
পোস্টে তামাম লিখেন–
আসসালামু আলাইকুম। আমি চুয়েট ৯ ব্যাচ এর তানজিল বলছি। ক্যাম্পাসে আমাকে অনেকেই TJ নামে চিনে। আজ খুব বিপদে পড়েই এই পোস্টটি দিচ্ছি। প্লিজ, একটু পড়ে দেখবেন। কোন বড় ভাই–আপু বা বন্ধু বা ছোট ভাই কেউ হেল্প করতে পারলে খুবই কৃতজ্ঞ থাকব।
লিখছি আজ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।
আমার বাবা T&T (বর্তমান BTCL) এর (retd) GM ছিলেন। ঢাকার হাতিরঝিল সংলগ্ন মহানগর এলাকায় আমাদের ৩ কাঠার একটি প্লট ছিল। আমরা পাশাপাশি আরও ২টি প্লট নিয়ে ডেভেলপারের কাছে দেই এবং প্রত্যেক ল্যান্ড ওনার ৫টি করে ফ্ল্যাট পাই। আমাদের ফ্যামিলি একটু বড় হওয়ায় আব্বা ডেভেলপার কে বলে একই ফ্লোরে ৩টি ফ্ল্যাট নেন। যার মধ্যে ২টি ফ্ল্যাট এক করে আমরা থাকব বলে সিদ্ধান্ত নেই এবং অপর ফ্ল্যাটটি ভবিষ্যতে আমার বোনকে দেব বলে ঠিক করি।
আমাদের এটা নিয়ে রেজিস্ট্রি কৃত চুক্তিও আছে। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু একদিন ফ্ল্যাট আন্ডার কন্সট্রাকশন থাকা অবস্থায় ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি আমাদের একটি ফ্ল্যাট (একই ফ্লোরের ৩টি ফ্ল্যাটের সিঙ্গেল ফ্ল্যাটটি) ডেভেলপার একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। যার কাছে বিক্রি করে সে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। আমরা ডেভেলপারের কাছে এ বিষয়ে আপত্তি জানালে তারা যথারীতি টালবাহানা শুরু করে। এরপর থেকেই আসলে সমস্যা শুরু হয়।
ঐ জনৈক “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তা” (নাম নিচ্ছি না) তার ক্ষমতা দেখান শুরু করে। প্রথমে আমাদের এলাকার সমিতিতে ডেভেলপারের বিরুদ্ধে লোক দেখানো একটা অভিযোগ করে। আমার বাবা ঐ সমিতির সহ–সভাপতি হওয়া সত্তেও আমাদের সভাপতি সাহেবের কারণে (অনিবার্য কারণবশত তারও নাম নিচ্ছি না) কোন রায় ছাড়াই বিচার অসমাপ্ত থেকে যায়। এটা নিয়ে ডিবি অফিস পর্যন্ত গিয়েও কোন এক অজানা (!!!) কারণে বিচার করা পর্যন্তই গিয়ে কোন রায় ছাড়াই অসমাপ্ত থেকে যায়।
২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে (প্রায় ৪.৫ বছর সময়) আমাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার কথা। অন্য ২ ল্যান্ড ওনারকে সময়মত তাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিলেও প্রায় ১.৫ বছর যাবত আমাদের কোন ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয় নাই। ৩/৪ মাস আগে আমরা ২টি ফ্ল্যাট এক ধরণের জোরাজুরি করে বুঝে নিলেও বাকি ৩টি ফ্ল্যাট আর বুঝিয়ে দিচ্ছে না। বলাবাহুল্য ঐ জনৈক “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তা” কোন রকম বৈধ দলিল ছাড়াই ক্ষমতাবলে আমাদের ফ্ল্যাটটি দখলে নিয়ে অনেক আগে থেকেই থাকা শুরু করে দিয়েছে। এদিকে আমাদের থাকার জন্য ফ্ল্যাটটি তে কোন কাজ না করেই ডেভেলপার চলে যায়।
প্রায় ২ বছর অপেক্ষা করে বিভিন্ন জায়গায় তদবির করেও কোন সুরুহা করতে না পেয়ে গত শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে আমরা নিজেরাই ফ্ল্যাটের কাজ করে নিব এবং কাজও শুরু করি এবং দারুণভাবে ১ বছর যাবত দেখা না পাওয়া ডেভেলপার আধ ঘণ্টার মধ্যে বাসায় এসে হাজির। যথারীতি তারা পুলিশের কাছে নালিশ করে কাজ বন্ধের জন্য। কিন্তু হাতিরঝিল থানার ওসি ডেভেলপারের কাছে ফ্ল্যাট না দেয়ার কারণ জিজ্ঞাস করলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারে না এবং একদিন সময় চায়।
তো long story short, ওসি সাহেব আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে বলে। গতকাল ২০ সেপ্টেম্বর আব্বা নামাজ পরতে বের হলে (বিশস্বত সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে জনৈক “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তা“র নির্দেশনায়) ডেভেলপারের লোকসহ প্রায় ৩০–৩৫ জন আমার ফ্ল্যাটে আসে। ঐ সময় ফ্ল্যাটে আমি, আমার ভাবি এবং ২জন মিস্ত্রি ছিলাম। ফ্ল্যাটের মিস্ত্রি বেশিরভাগ দুপুরে খাওয়ার জন্য চলে গিয়েছিল। তারা আমার মিস্ত্রিকে ২জনকে মারধর করে, আমিও কিছু মারধরের শিকার হই। আমার মোবাইল নিয়ে যায়, চশমা ভেঙ্গে ফেলে। যদিও ভাবি সাথে থাকায় ফ্ল্যাটের দখল নিতে পারে না। এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে।
এতটুকু কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি যতটুকু পেরেছি সংক্ষিপ্ত আকারে লিখার চেষ্টা করেছি। সবকিছুর মূলে ঐ জনৈক “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তা“। এ বিষয়ে কেউ যদি যে কোনভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারেন plz help করবেন। It can be any kind of suggestion or legal help or direct help. Any kind of help will be appreciated.
You can find me at this number 01684428155 or can inbox me. Right now we are not in a good situation. Please help us.
প্রসঙ্গত, গত ১০ অক্টোবর সন্ত্রাসী হামলায় দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান তামিম নিহত হন। রাজধানীর হাতিঝিলের মহানগর প্রজেক্টে নিজ বাসায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজেদের জমিতে নির্মিত এ্যাপার্টমেন্টে ২০–২৫ জন সন্ত্রাসীর হামলার শিকার হন তিনি। বেধড়ক মারধরে গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তামিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তামিমের বাবা প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ জানান, চুক্তি অনুযায়ী পাঁচটি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল অবাসন প্রতিষ্ঠানটির। দুটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরও করা হয়। বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার শ্বশুরের কাছে বিক্রি করেন প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ। এর জেরেই প্রাণ গেল তামিমের।
এ ঘটনায় মামলা করেছেন নিহতের বাবা। আর ৫জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন, মো. আব্দুল লতিফ (৪৬), মো. কুরবান আলী (২৪), মাহিন (১৮), মোজাম্মেল হক কবির (৫২) ও বাঁধন (২০)।
জানাগেছে, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তামিম। যোগ দেন দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগে। মহানগর প্রজেক্টের বাড়িটির ৭ তলায় দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন তিনি ও তার পরিবার। প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজ লিমিটেড ডেভলপার কোম্পানি তাদের মোট পাঁচটি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তামিমরা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে বছর খানেক আগে একটি মামলাও করা হয়।